প্রভাবশালীদের প্রভাবমুক্ত করে ১০০দিনের কাজই হতে পারে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাঁচার রসদ
সব্যসাচী ঘোষ, আলিপুরদুয়ার : গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে শুরু করে পাড়ার পঞ্চায়েত প্রতিনিধি কিংবা তার সুপারভাইজার অথবা এলাকার দাপুটে নেতা এদের অঙ্গুলি হেলনেই ঠিক হয়ে থাকে পাড়ার কোন দাদা-বৌদি কিংবা কাকু-কাকিমার নাম ১০০দিনের মজুরের তালিকায় উঠবে। জবকার্ডে নাম উঠে গেলো মানেই কেল্লাফতে। একদিনও কাজ না করে ফি বছর টাকা ঢুকে যাচ্ছে বৌদি-কাকিমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। খবর হতেই পাড়ার পঞ্চায়েত প্রতিনিধি বা তার সুপার ভাইজার কিংবা এলাকার দাপুটে নেতা বিকেলে হাজির বাড়িতে। সন্ধ্যা কালীন চা খেতে খেতে দাদার সরল প্রশ্ন, ‘এবার কত ঢুকলো ? আর এক কিস্তিও ঢুকে যাবে এক-দু মাসেই। চিন্তা নেই যতদিন আমি আছি পেয়ে যাবে। এবারের হিসেবটা করে ফেলো, যাই আরো কয়েকটা বাড়ি যেতে হবে।’
করোনা পরিস্থিতিতে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভূত তাড়া করে বেড়ালো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলোকে। কিন্তু এই ১০০ দিনের কাজের আশি শতাংশও যদি সঠিকভাবে ফলপ্রসূ হতো তবে পরিযায়ী শ্রমিকের থিওরিটাই মনে হয় থাকতো না। যে দরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য ১০০দিনের কাজের প্রকল্প তারা নিজের পাড়া-মহল্লাতেই কাজ পেতেন যদি পাড়ার বৌদি-কাকিমনির নাম জবকার্ডে না থাকতো। গরীবের সবচেয়ে বড় প্রকল্পই হয়ে উঠেছে গরীব ঠকানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার আর স্বাধীনত্তর ভারতবর্ষের সম্ভবত সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। কিন্তু কেউ কোনো মুখ খুলছে না কেনো ? নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের মতো এই প্রকল্পের বরাদ্ধ অর্থের পুরোটাই চলে যাচ্ছে শতাংশের হিসাবে পাড়ার বৌদি-কাকিমা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, সুপার ভাইজার, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান,বিরোধী দলনেতা, ইঞ্জিনিয়ার সবার বাড়ির ইট-বালু-সিমেন্টে।তাই স্বভাবতই সবাই চুপ। আর কাজ নাই,কাজ নাই করে এই প্রকল্পের মুখ্য চরিত্ররা বাড়ি-ঘর স্বজন ফেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরে,নগরে,বন্দরে। কাজ হচ্ছে বটে।
আরও পড়ুন: আয়লা,বুলবুলের পথ ধরে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’, রাতের ঘুম ছুটেছে সুন্দরবন বাসীর
তবে ১০০ শ্রমদিবসের কুড়ি দিবস ড্রেনের মাটি মাঠে ফেলে কিংবা পুকুরে পুকুর খনন করে। করোনা পরবর্তী ভারতবর্ষে সবচেয়ে সংকটের মুখে পড়তে চলেছে গ্রামগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিক, শহরের হকার সহ সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলো। এই পরিস্থিতিতে ১০০দিনের কাজের ভিলেন গুলোকে চিহ্নিত করে তাদের সরিয়ে এই প্রকল্পের মুখ্যচরিত্র গুলোকে কাজ না দিলে করোনার জেরে আর্থিক মন্দা কাটাতে প্রধানমন্ত্রীর স্বনির্ভর ভারতের প্যাকেজের প্রায় গোটাটাই গিলে ফেলতে পারে সরকারি প্রকল্পের প্রভাবশালী রাঘববোয়ালরা। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু ফেলা শাসক-বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা কিংবা মন্ত্রী আমলারা যদি একটু সচেষ্ট হন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে প্রভাবশালীদের প্রভাবমুক্ত করতে তাহলে করোনার জেরে দেশের চরম আর্থিক সংকটে ডুবতে থাকা দরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষগুলো একটু রেহাই পান ডাল-ভাত খেয়ে।