সংঘর্ষ চরমে, নাগোরনো-কারাবাখের নিহত ৬০৪ সেনা

ইয়েরেভান ও বাকু, সংবাদ সংস্থা: দ্রুত গতিতে বাড়ছে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিহত সেনা সদস্যের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন সেনা সদস্য। আর চলমান সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬০৪ জন সেনা সদস্য। গণমাধ্যমে এই তথ্য তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এতকিছুর মাঝে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান অভিযোগ করেছেন, ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে জরুরি মানবিক সহায়তা বহনকারী বিমানের প্রবেশে তুরস্ক। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
দুই দেশের সংঘাতে শুধু সেনা সদস্য নয়, প্রাণ হারিয়েছেন বহু বেসামরিক নাগরিক। সেকথা স্বীকার করে এদিন পাশিনিয়ান বলেন, ‘আর্মেনিয়ায় বহু হতাহত হয়েছে। তাই আমি আমাদের সকল ভুক্তভোগী, শহীদ, তাদের পরিবার, বিশেষ করে শহীদদের মায়েদের উদ্দেশ্যে নতজানু হয়ে সম্মান জানাই। তাদের এই ক্ষতিকে আমি আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ’আমাদের সবার জানা প্রয়োজন যে আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতি পার করছি। দেশের জনশক্তি ও উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও আর্মেনিয়ার সেনারা এখনও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং প্রতিপক্ষের জনশক্তি ও উপকরণের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ আর এদিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ অভিযোগ তুলেছেন, আর্মেনিয়া তাদের গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইনে আক্রমণ করেছে। আর্মেনিয়া আমাদের পাইপলাইন আক্রমণ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা যদি সেখানকার পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমি বলতে পারি যে এর পরিণতি গুরুতর হবে।’
উল্লেখ্য, গত মাসে শুরু হওয়া এই সংঘাতে নিহতদের মরদেহ সরিয়ে নেয়া এবং বন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় নাগোরনো-কারাবাখে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া। কিন্তু উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক অঞ্চলটিতে আটকা পড়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জ ওই অঞ্চলে মানবিক সঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ইতিহাস বলছে, নাগোরনো-কারাবাখ হচ্ছে ৪ হাজার ৪শ বর্গ কিলোমিটার (১ হাজার ৭০০ বর্গ মাইল) আয়তনের একটি পর্বতাঞ্চল। যেখানে ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান এবং মুসলিম তুর্কদের আবাসস্থল।
তবে এই অঞ্চলটি একটি বিবাদপূর্ণ ছিটমহল হিসাবে পরিচিত। যে অঞ্চলটিকে ঘিরে ১৯৮৮-১৯৯৪ সালে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এবং নিহত হন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পরে ১৯৯৪ সালে দুই দেশ অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছালেও সময়ে সময়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর চলমান সেই উত্তেজনায় এখন নিহতদের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন দুই দেশের অসহায়, নিরাপরাধ শিশু ও নারীরা।