বিষ্ণুপুরে এক বিজেপি নেত্রীকে গুলি করল দুষ্কৃতীরা, অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে

বাবলু প্রামানিক ও ফিরোজ আহমেদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: লকডাউনের মাঝে গুলিবিদ্ধ হলেন এক বিজেপি নেত্রী। জানা গিয়েছে, ওই নেত্রীর স্বামীর খোঁজ করতে কয়েকজন দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
তবে স্ত্রী বলতে অস্বীকার করায় তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। রাগে দুষ্কৃতীদের দিকে ঝাঁটা ছুড়ে মারেন ওই গৃহবধূ। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে দুষ্কৃতীরা গৃহবধূকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার একটি হাসপাতালে। কী ঘটেছিল এদিন?
সোমবার লকডাউনের দিনে বেলা এগারোটা নাগাদ বাড়ির সামনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের কুলেরদাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুদেবপুরে গুলিবিদ্ধ হন বিজেপির মহিলা কর্মী রাধারানি নস্কর। বয়স ৩২। তিনি বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্য বলে জানা গিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এদিন সকালে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী পঞ্চানন নস্কর রাধারানিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় । রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন রাধারানি। তাঁকে পরিবারের লোকজন অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে নেপালগঞ্জের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বিজেপির অভিযোগ, ওই এলাকায় তাঁদের সংগঠন মজবুত হচ্ছিল। এতেই ভয় পেয়ে তৃণমূল এই হামলা চালিয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা বিজেপি করেন বলে তাঁদের বাড়িতে এসে আক্রমণ করে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সকাল ১১টা নাগাদ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায় তারা। রাধারানি নস্করের স্বামী অরুণ নস্করের খোঁজ করে তারা। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে রাধারানি নস্করের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীদল। রাধারানি নস্করকে মারধর করে।
আত্মরক্ষার্থে রাধারানি নস্করও পাল্টা ঝাঁটা ছুড়ে মারেন। অভিযোগ, এরপরই দুষ্কৃতীরা রাধারানি নস্করকে গানপয়েন্ট রেখে গুলি চালায়। গুলি লাগে মাথার পিছনে বাঁদিকে। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন রাধারানি নস্কর। বিজেপি কর্মী রাধারানি নস্কর মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই তখন পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীদের দলটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু রাধারানি নস্করের বাড়িই নয়, ওই এলাকার আরও বেশ কিছু বাড়িও দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করে। লুঠপাট চালায়। জানা গিয়েছে, রাধারানি নস্করের স্বামী অরুণ নস্কর বিজেপির বুথ কমিটির সদস্য। আর স্ত্রী রাধারানি নস্কর বুথ কমিটিতে হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব ছিলেন। বাড়ি এসে এভাবে হামলার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি সুফল ঘাঁটুর অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁদের মহিলা মোর্চার নেত্রীকে গুলি চালিয়ে খুনের চেষ্টা করে।
এদিকে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল জানান, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই। পরিকল্পিতভাবেই বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে জড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, রবিবার গ্রামের এক যুবক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিজেপির কিছু কর্মী তাঁকে মারধর করে। প্রতিবাদ করলে বিজেপি কর্মীরা ওই যুবকের বাড়িতে গিয়েও হামলা চালায়। সোমবার ওই যুবক ও আরও কয়েকজন জবাবদিহি চাইতে ওই বিজেপি নেত্রীর বাড়িতে আসে। তারপর ফের যুবকটিকে মারধর করা হয়। যুবকটির পক্ষের লোকজন তখন ক্ষিপ্ত হয়ে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, দলীয় নেত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে এলাকা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মীরা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনা ঘিরে রঘুদেবপুরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাজনৈতিক কারণেই গুলি, নাকি নেপথ্যে অন্য কারণ, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গুলি চলার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে বিষ্ণুপুর থানার স্পেশাল টিম ও বিষ্ণুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ডিএসপি জীবনেশ রায়। গুলি চলার খবর পেয়ে পুলিস ঘটনাস্থলে এলে পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী।ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।