উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে করোনা আক্রান্ত প্রসূতি সন্তানের জন্ম দিলেন
সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনজ আক্রান্ত এক প্রসূতি সন্তানের জন্ম দিলেন। সোমবার রাতে তার লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে ওই প্রসূতি করোনায় আক্রান্ত।
প্রসূতির কোনও ভ্রমণ ইতিহাস নেই। ফলে শিলিগুড়ি মহাকুমার অটল চা বাগানের এই মহিলা কীভাবে করোনা সংক্রমিত হলেন তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনাই জোরালোভাবে উঠেে এসেছে। পাশাপাশি অপরিচিত এক ওঝার উপস্থিতিও সংক্রমণের সম্ভাব্য সূত্র হিসেবে উঠে আসছে।
এই প্রসূতির সঙ্গে সোমবার রাতে শিলিগুড়ি মহকুমারই খড়িবাড়ি ব্লকের এক বৃদ্ধার শরীরেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ক্যান্সার আক্রান্ত এই বৃদ্ধা লক ডাউনের আগে মুম্বাই গিয়েছিলেন চিািৎসার জন্য। সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মুম্বাই থেকে ফিরেছিলেন। প্রতিবেশীদের আপত্তিতে বাড়িতে উঠতে পারেননি। তিনি কোয়ারান্টাইন সেন্টারে আশ্রয় নেন। সেখান করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফলে এখন শিলিগুড়িতে মোট ৬ জন করোনা আক্রান্ত রয়েছেন।সোমবার রাতে নতুন করে ধরা পড়া দুই মহিলার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশী মিলিয়ে মোট ২৫ জনকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ায় ওই প্রসূতিকে প্রথমে নকশালবাড়ি হাসপাতালে পড়ে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই প্রসূতির মতো তাঁর পরিবার কারও এবং তিনি যেখানে থাকেন সেই লেবার লাইনের আশেপাশে কোন প্রতিবেশীও এরমধ্যে বাইরে থেকে আসেননি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে একমাত্র তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এর মধ্যে কয়েকবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকেই সংক্রমিত হয়েছে এই মহিলা? এব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি। ‘গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ বলে তাঁরা এই বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই প্রসূতির করোনা সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। পাশাপাশি এক ওঝার উপস্থিতিও এর মধ্যে দেখা দিয়েছে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এক ওঝা বাড়িতে এসেছিল। সে ওই প্রসূতিকে ঝাড়ফুঁক করে। কিন্তু ওই ওঝা কোথা থেকে এসেছিল এবং তারপর কোথায় রয়েছেন তা কেউ জানেন না। কেউ কেউ মনে করছেন বাইরে থেকে আসা ওই ওঝার থেকেও অটল চা বাগানের এই প্রসূতি করোনা সংক্রমিত হতে পারেন।
ওই প্রসূতিকে এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। কর্তব্যরত নার্স এবং ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই কিট পরেই ওই মহিলার সন্তান প্রসব করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রসূতি বিভাগের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নবজাতক ও তার মাকে রাখা হয়েছে। দুজনেই সুস্থ রয়েছে।