
উৎপল মৈত্র: করোনা আবহে অনেক কিছুই থমকে গিয়েছিল একসময়। তারপর জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলতেই হবে এই ভাবনায় পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলছে সব কিছু। নিয়মের হাত ধরেই এসেছে শরৎ। আর তাই মা-ও আসছেন। এই পরিস্থিতিতেও তাঁর আবাহনে প্রস্তুতি নিচ্ছে শহর কলকাতা। আজ একটু খোঁজ নেওয়া যাক সন্তোষপুর অঞ্চলের পুজোগুলোর।

সুকান্তসেতুর কাছেই শ্যামাপল্লীর শ্যামা সংঘে ৪১ তম বর্ষে এবারের ভাবনা ‘ঊষা’। করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র জগতে প্রত্যেকেই শারীরিক মানসিক অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত। কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ , অপেক্ষায় সবাই। অপেক্ষা সেই ভোরের , অপেক্ষা সেই ‘ঊষা’-র। সেই অনাগত ভোরের স্বপ্নে বিভোর এক খামারের পরিবেশ সৃষ্টি করছেন শিল্পী অভিজিৎ ঘটক। খামারে থাকা বিভিন্ন পশুপাখির মডেল থাকবে , আবহে থাকবে তাদের ডাক। মণ্ডপ, মাতৃমূর্তি, আলোক সমগ্র পরিকল্পনা শিল্পীর। শ্যামাপল্লীর এবারের পুজোর সভাপতি দেবব্রত মজুমদার, সচিব অম্লান দাসগুপ্ত। তিনদিক খোলা এই মণ্ডপে কোনও কাটাফল ব্যবহার হবে না পুজোর কাজে। প্রসাদেও দেওয়া হবে গোটা ফল। শ্যামাপল্লী পুজোকমিটি এবার অন্যান্য বাজেট কমিয়ে পুজোর যারা কারিগর, ঢাকি, পুরোহিত সবাইকে অন্য বছরের তুলনায় বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।
অন্যান্য বছরের মতই চমক থাকলেও, এই অতিমারীর কারণে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত, সন্তোষপুর লেকপল্লীর ৬৩তম বর্ষে এবারের থিম ‘মাটির কান্না’। খুঁটিপুজো হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর। পল্লীগ্রামের আবহে তৈরি এই পুজো আড়ম্বরের উৎসব নয়, বরং পুজো হবে ভক্তিতে ও মানব সেবায়। সুন্দরবনের প্রান্তিক সমাজের শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে দেওয়া হবে পুজোর জামাকাপড় । মণ্ডপসজ্জায় সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, মাতৃমূর্তি সনাতন দিন্দা, আলোকিত করবেন দীনেশ পোদ্দার। এবারের সভাপতি গোপাল দাস, সচিব সোমনাথ দাস। প্রতিবছরের মত দর্শকের সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এবং সরকারি বিধিনিষেধ ও নিয়ম মেনে ডিজিটাল ভিউইং এর জন্য জায়ান্ট স্ক্রিন থাকবে, স্যানিটাইজার ও মাস্কের (দরকারে) ব্যবস্থাও থাকবে। স্যানিটাইজ টানেলের পরিকল্পনাও আছে। ফেসবুকে Santoshpur Lake Palli -SLP পেজে লাইভ স্ট্রিমিং ও চলবে। ইতিমধ্যে এই পেজে পুজোর প্রস্তুতি র ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে।

সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের ৭১ বর্ষে এবারের ভাবনা ‘আভাস’। মণ্ডপসজ্জায় শিল্পী অসীম পাল। মণ্ডপ ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিমা গড়ছেন পরিমল পাল। প্রাথমিকভাবে এবার ছোট করে পুজো করার ইচ্ছে থাকলেও পুজো নির্ভর মানুষজনের কথা ভেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবারের পুজোর ভাবনা, বিভিন্ন ধরনের রুপকের মাধ্যমে আভাস তুলে ধরা। বিভিন্ন ফর্ম যেমন ত্রিভূজ চতুর্ভুজ বৃত্তের মাধ্যমে জ্যামিতিক আভাস পজিটিভনেস এর আভাস। অতিমারীর সময়ে স্বল্প বাজেট, সময়ের অভাব মাথায় রেখে মূলত টিনের বিভিন্ন পুরনো জিনিসপত্র ব্যবহার হয়েছে এই মণ্ডপে। সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় ও সচিব দেবাশিস ব্যানার্জির দাবি এই মণ্ডপে পয়সার ঝনঝনানি নয় বরং দর্শনার্থীদের চোখের, মনের খিদে মিটবে। সরকারি নির্দেশ মতো তিন দিক খোলা এই মণ্ডপে পাওয়া যাবে ক্লাবের মাস্ক।
সন্তোষপুরের আর একটি দর্শকধন্য পুজো সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ পল্লীমঙ্গল সমিতির ৫৪ তম বর্ষে এই অতিমারীর সময় সরকারি বিধি নিষেধ মেনে এবং থিমের পুজোর খরচ বাঁচিয়ে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাধারণ ভাবে পুজোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী বছরগুলোতে আবার বড়করে পুজোর ভাবনা রয়েছে পল্লীমঙ্গল সমিতির।