হেডলাইন
অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচার ভেঙে অক্সিজেনের নল ছিঁড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু গড়িয়ার করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের, ক্ষুব্ধ পরিবার
অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রশংসা করলেও একের পর এক ঘটনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাই যেন প্রকট হয়ে উঠছে। এতদিন ধরে করোনা আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড না পাওয়ার অভিযোগ তো ছিলই, এবার অ্যাম্বুলেন্স কর্মীদের গাফিলতিতে স্ট্রেচার ভেঙে অক্সিজেনের নল ছিঁড়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হল গড়িয়ার সুভাষপল্লির বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী সনৎ দে-র। সাত দিন ধরে বেড না পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বেড পেয়েও চোখের সামনে এভাবে কাকার মৃত্যুর ঘটনায় অব্যবস্থার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মৃতের ভাইপো ঋত্বিক দে।

ঋত্বিকবাবু জানান, বেশ কিছুদিন বাড়িতে শারীরিক অসুস্থতার পর সনৎবাবুর করোনা পরীক্ষা করা হয়। গত মঙ্গলবার ১৪ জুলাই করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে সনৎবাবুর। হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য ভবন জানায়, কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপর তিন দিন কেটে গেলেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে ফোন আর আসেনি বলে অভিযোগ মৃতের ভাইপো ঋত্বিকবাবুর। এর মধ্যেই আচমকা সেরিব্রাল অ্যাটাক হলে সনৎবাবুর অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

বাধ্য হয়ে বাড়িতেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে বৃদ্ধের চিকিৎসা শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। যদিও তারপরেও বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরপর তারা নিজেদের উদ্যোগে শহরের হাসপাতালে কোভিড বেড খুঁজতে থাকেন। কিন্তু ৭ দিন ধরে হাসপাতালে বেড খুঁজলেও বেড পাননি। অবশেষে ওই বৃদ্ধকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানোর জন্য বেড পাওয়া যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করিয়ে দেন স্থানীয় বিধায়ক-কাউন্সিলর।
তবে পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর যে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠায়, তার কর্মীদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রথমে করোনা রোগী জানতে পেরে প্রথমে অ্যাম্বুল্যান্সকর্মীরা রোগীকে ছুঁতে চাননি। ফের স্বাস্থ্যভবনে যোগাযোগ করা হলে তাদের নির্দেশে অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীরা কোনওরকমে স্ট্রেচারে শুইয়ে সনৎবাবুকে অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠান। গাড়ি এসে পৌঁছয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। কাকাকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছনোর পর তিনি কাগজপত্র তৈরির জন্য ভিতরে যান।
কাগজপত্র তৈরি করে ফিরে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়ে যায় ঋত্বিকবাবুর। তাঁর কথায়, তিনি ফিরে এসে দেখেন তাঁর কাকা অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর অক্সিজেনের নল ছিঁড়ে, স্ট্রেচার ভেঙে পড়ে রয়েছেন। আর অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীরা বাইরে বসে হাঁফাচ্ছেন। অর্থাৎ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে রোগী নামাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, ওই দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে সনৎবাবুর।
ঋত্বিকবাবুর অভিযোগ, এত রোগী দিন রাত নিয়ে যাচ্ছেন, অথচ অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীদের কোনও প্রশিক্ষণই নেই। সেই সঙ্গে স্ট্রেচারও ভাঙা ছিল, সেই তথ্যও তাদের বলা হয়নি, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্স চালকরাও পরীক্ষা করে আনেননি। আগে থেকে জানা থাকলে তার কাকার এরকম মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটত না। কেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ গোটা পরিবার। বিষয়টি নিয়ে তারা স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থও হবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। তবে এই ঘটনা রাজ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা যেন আবার প্রকাশ করে দিল।