অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি কমানোর দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল অভিভবকরা। দফায় দফায় বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্ষোভে সামিল হয়ে ছিল অভিভবকরা। তবুও স্কুল কর্তৃপক্ষ ফি কমাতে নারাজ। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেও কোনও আশ্বাস মেলেনি। বারবার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফী বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। তাই এবার ফি কমানোর আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিলেন ইউনাইটেড গার্জেন্স অ্যাসোসিয়েশন।
বুধবার কলেজ স্কোয়ারের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান এই অভিভাবকদের সংগঠন। এরপর ই-মেইল মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফি কমানোর দাবি জানিয়ে একটি খোলা চিঠি পাঠায় তারা। স্কুলের সামনে বিভিন্নভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো ফল না মেলায় এবার প্রশাসনের মাথার কাছে দ্বারস্থ হলেন অভিভাবকরা। তাদের বিশ্বাস তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার পাবেন। বেশ কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ফি মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অভিভাবকরা। এর মধ্য রয়েছে জিডি বিড়লা স্কুল, মহাদেবি বিরলা, সেন্ট জোন্স, আরএন সিং মেমোরিয়াল সহ একাধিক স্কুল। যেখানে বারবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ন্যূনতম নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বেসরকারি স্কুল গুলিকে। সেখানে দিনের পর দিন ফী বৃদ্ধির অভিযোগে উত্তপ্ত হয়েছে স্কুল চত্বর। বুধবারে মহাদেবি বিরলা স্কুল চত্বর উত্তপ্ত হয় এই একই অভিযোগে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এদিন বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকদের নিয়ে তৈরি সংগঠন ইউনাইটেড গার্জেন অ্যাসোসিয়েশন একটি খোলা চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। তারা ওই চিঠিতে জানান, স্কুল গুলি যেন কেবলমাত্র টিউশন ফি বাবদ টাকাই এখন নেয়। যেহেতু এই মুহূর্তে ল্যাবরেটরি, বৈদ্যুতিক খরচ সহ একাধিক পরিষেবা স্কুল দিচ্ছে না তাই সেই বাবদ টাকা যেন আপাতত মুকুব করা হয়। এই প্রসঙ্গে ওই সংগঠনের আহ্বায়ক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এই সময় পশ্চিমবাংলার অভিভাবকরা সকলেই আর্থিক দিক থেকে বিপর্যস্ত। গত তিন মাস ধরে স্কুল বন্ধ কবে স্কুল খুলবে তার কোন ঠিক নেই। তাই আমরা চাই এখন কেবলমাত্র টিউশন ফি দিতে।“ অন্যদিকে বেশ কিছু স্কুলে টিউশন ফি নাম করে অন্যান্য খরচ নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেইসব স্কুলকে টিউশন ফি বাবদ তারা যে টাকা নিয়েছেন তার অর্ধেক ফেরত দিতে হবে বলেও এদিন দাবি তুলেছে এই অভিভাবকদের সংগঠন।
ফি বৃদ্ধির পক্ষে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলির অবশ্য রয়েছে অন্য যুক্তি। তাদের মতে স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কাজ চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন দিতে হচ্ছে। স্কুলের ফান্ড এতটাও মজবুত নয় যে সেখান থেকে মাসের-পর-মাস শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া যাবে তাই সেই কারণে বাধ্য হয়ে এক প্রকার ফি বৃদ্ধি করছেন তারা। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও কিভাবে এই সংকটকালীন সময়ে অতিরিক্ত ফি নিতে পারে স্কুলগুলি তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ কি তবে প্রশাসনের নির্দেশ কে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।