
শরণানন্দ দাস, কলকাতা: বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় রেলের ১৫১টি রুট। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি রুটের দূরপাল্লার ট্রেন রয়েছে। রেল জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সংস্থা ওই ট্রেন চালাতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া ডাকার কাজ শুরু করে দিতে চাইছে রেল। গতবছর ডিসেম্বরে ১৫১টি ট্রেনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নীতিআয়োগ। সেই সময়েই ২০টির মতো বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আদানিপোর্ট, টাটা রিয়েলিটি অ্যান্ডইনফ্রাস্ট্রাকচার,এসেলগ্রুপ,ম্যাককিউয়রি গ্রুপ, বোম্বারডিয়ার। রেলের তরফে এই ঘোষণার পর কাদের হাতে বেসরকারি ট্রেন যাবে সেই আলোচনায় সংস্থাগুলোর নাম ভেসে উঠেছে।
তথ্যাভিঞ্জ মহলের বক্তব্য করোনা পরিস্থিতির আগে এই সংস্থাগুলো আগ্রহ দেখিয়েছিল। করোনা পরবর্তী এই সময়ে তারাই ফের আগ্রহী হবে কি না তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠলেও এবারের দরপত্র ডাকার পরও এই সংস্থা গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ এই সংস্থাগুলোর সরকারি প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। যেমন আদানি গোষ্ঠীর দেশের বন্দর ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক হাবের মধ্যে সংযোগকারী ৩০০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পেও জড়িত রয়েছে এই সংস্থা। আবার এসেল গ্রুপের শাখা সংস্থা এসেল ইনফ্রাপ্রোজেক্টস হাওড়া- চেন্নাই ইস্টার্ন ফ্রেট করিডরের প্রকল্পে জড়িত। টাকা রিয়েলটিও পুণে মেট্রো প্রকল্পের কাজের বরাত পেয়েছে। জার্মান সংস্থা বম্বার্ডিয়ারের ভারতীয় রেলের ৫০ বছরের সম্পর্ক। দিল্লি মেট্রো প্রকল্পেও এই সংস্থা জড়িত। ফরাসি সংস্থা অ্যালস্টম এখন চেন্নাই, কোচি মেট্রো প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।
রেলমন্ত্রকসূত্রে খবর, ১০৯ টি রুটের জন্য ১৫০ টিরও বেশি অত্যাধুনিক রেক আনা হবে। ট্রেন গুলির সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। প্রত্যেক রেকে ১৬ টি করে কামরা থাকবে। ট্রেনের গার্ড ও চালক দেবে রেলই। মন্ত্রকের খবর, বেসরকারি লগ্নিবাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি আসবে রেলের।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর এই লাদাখ সফর বীর সেনাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে তুলবে: অমিত শাহ
রেলের ১৫১ টি ট্রেনের মধ্যে রাজ্যের ১৫ টি ট্রেন রয়েছে- রাঁচি ভায়া পুরুলিয়া, হাওড়া- পুণে, হাওড়া- চেন্নাই, হাওড়া- পুরী, হাওড়া- রাঁচি,নিউ বঙ্গাইগাও – হাওড়া, হাওড়া- আনন্দ বিহার, হাওড়া- বারানসী ভায়া পটনা, শিয়ালদা- গুয়াহাটি, হাওড়া- ভাগলপুর, আসানসোল- পুরী, আসানসোল- পুরী, আসানসোল- সুরাত, হাওড়া- সেকেন্দ্রাবাদ,হাওড়া- বেঙ্গালুরু, হাওড়া- মুম্বাই।
রেল মন্ত্রকের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে রেলের ঘরে প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঢুকবে। ওই উদ্যোগকে বেসরকারিকরণের অভিমুখে বড় মাপের পদক্ষেপ বলছেন রেলের কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব। বর্তমানে প্রতি যাত্রী পিছু প্রতি কিলোমিটারে ৪৩ পয়সা ভর্তুকি দেয় রেল। রেল সূত্রের মতে, টিকিটের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বেসরকারি হাতে যাওয়ায় তাতে ভর্তুকির সুবিধে থাকবে না। ফলে টিকিটের প্রকৃত দাম ও বেসরকারি সংস্থার লাভ দুই মিলিয়ে টিকিটের যা দাম হবে তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।