বুড়িগঙ্গায় ডুবন্ত লঞ্চ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত যাত্রী উদ্ধার

যুগশঙ্খ প্রতিবেদন, ঢাকাঃ অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য। কেউ বিশ্বাসও করতে চাইবে না যে প্রায় ৫০ ফুট জলের নিচে ডুবন্ত লঞ্চ থেকে দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা পর আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বাংলাদেশের বুড়ীগঙ্গায় দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চে। বাংলাদেশের নদী বন্দরের যুক্ত পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডুবুরিরা যখন টিউবের মাধ্যমে লঞ্চটি ওপরে তোলার চেষ্টা করছিলেন এবং লঞ্চটির একাংশ ওপরে উঠে আসে; ঠিক তখনই ওই ব্যক্তি নিজ চেষ্টায় লঞ্চের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানিয়েছেন, উদ্ধার ব্যক্তির নাম সুমন ব্যাপারী। তিনি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর আব্দুল্লাহপুর গ্রামের সজল বেপারীর ছেলে। সুমন পেশায় ফল ব্যাবসায়ী। তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিডফোর্ড) হাসপাতালের ক্যাজুয়েলিটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের বেডে বসে সুমন ব্যাপারী দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘লঞ্চ যখন ডোবে, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় ঘুম ভাঙে। শুধু বুঝতে পারলাম, লঞ্চটি ধাক্কা খেল। আর কিছু খেয়াল নেই। কিসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় দাড়িয়েছিলাম রড ধরে।’ দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে আসে, সেসময় তিনি ইঞ্জিন রুমের সাইডে বসা ছিলেন বলেও জানান।
দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হইলো ১০ মিনিট ছিলাম, আল্লাহ যে কেমন ১২-১৩ ঘণ্টা পার কইরা দিলো বলতে পারি না। আমি ভেতরে কিসের মধ্যে ছিলাম, কিচ্ছু বুঝতে পারিনি, তবে জলের তলে ছিলাম এইটুক জানি।’ সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বাইর কইরা নিয়ে আসছে। বের হওয়ার সময় কিচ্ছু বুঝি নাই। বের হওয়ার পর আমারে উদ্ধার কইরা নিয়ে আসছে। জলের মধ্যে যখন ছিলাম, তখন সাঁতার কাটার ফোম দেখসিলাম চোখের সামনে, হাতরায় নিতে পারতেসিলাম না, পরে লোহার রড ধরে বসে ছিলাম।’ নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল কিনা জানতে চাইলে সুমন ব্যাপারী বলেন, ‘নিঃশ্বাস আল্লাহ দিসে। না দিলে তো মইরাই যাইতাম। ওপরে যখন উঠি, তখন কিছুই বুঝতে পারি নাই, ক্যামনে উঠলাম কীভাবে উঠলাম।’
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা এম এ সাত্তার সরকার জানান, সুমনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এখনও। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন, কথাবার্তা বলছেন। আমরা কিছু টেস্ট করবো, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।’