স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর বিদ্যুতের আলো জ্বললো আদিবাসী অধ্যুষিত গলসির দুটি গ্রামে
প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে ৭৩টা বছর।এতদিন সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ঢাকা পড়ত পূর্ব বর্ধমানের গলসির আদিবাসী অধ্যুষিত দুটি গ্রাম হলুদগড়ে ও কাঁটাগড়ে।সন্ধ্যার পর আলোর জন্য হ্যারিকেন নয়তো লন্ঠন অথবা লম্ফর উপর তাদের ভরসা করতে হত। তাই পাখার হাওয়া খাওয়ার সাধ এতদিন অপূর্ণই রয়ে গিয়েছিল এই দুই আদিবাসী গ্রামের মানুষজনের। ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস পার করে মঙ্গলবার প্রথম বিদ্যুৎতের আলো জ্বললো হলুদগড়ে ও কাঁটাগড়ে গ্রামে। তাই এদিন খুশির জোয়ারে ভাসলেন আদিবাসী অধ্যুষিত এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা।
গলসি ২ ব্লকের মসজিদপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম হলুদগড়ে ও কাঁটাগড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামে বিদ্যুৎতের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় দূর্বিষহ ভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। তারা হ্যারিকেন ও লন্ঠনের আলোর ভরসাতেই দিন কাটিয়ে আসছিলেন। পাখার হাওয়া খাওয়ার আশা ত্যাগ করে হাঁসফাঁস গরমে দিন কাটানো ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না। বর্ষায় কালে অন্ধকার নামলেই গ্রামে সাপের উপদ্রব দেখা দিত। আলোর অভাবে গ্রামের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারত না। গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে মেলে তার জন্য এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ দফতর সহ প্রশাসনের নানা মহলে ঘুরে ঘুরে আবেদন নিবেদন করে গিয়েছিলেন। অবশেষে এদিন আদিবাসী অধ্যুষিত হলুদগড়ে ও কাঁটাগড়ে গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে জ্বললো বিদ্যুৎতের আলো। ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পার করার পর গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হওয়ায় এদিন বাঁধ ভাঙা উচ্ছাসে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন:শতদ্রু-যমুনা লিঙ্ক ক্যানেল তৈরি হলে পাঞ্জাবে আগুন জ্বলবে: অমরিন্দর সিংহ
দুই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে এদিন বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে পেরে খুশি গলসির বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার সুবীর বিশ্বাস। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পরিষেবা পাবার জন্য দুই গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে আসছিলেন। গ্রামের মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে দুটি নতুন ট্রান্সফরমার বসানো হয়। এদিন তাদের ঘরে বিদ্যুৎতের আলো জ্বললো। সব থেকে খুশির খবর হল, বিনামূল্যে আপাতত ৫০টি ঘরে কোটেশন ছাড়াই কানেকশন দেওয়া হয়েছে।এই দুই গ্রামের উপভোক্তাদের আরও সুবিধা দিতে কানেকশন পাওয়ার ৮৫০ টাকা সাত দফায় পরিশোধ করার সু্যোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও যাদের বিলের টাকা অনেক বেশি হয়েছে মনে করছেন তারা যাতে অসুবিধায় না পড়েন তার জন্য কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে স্টেশন ম্যানেজার বার্তা দেন বিদ্যুৎতের অপব্যবহার না করে সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন। বিদ্যুতের বিল ঠিকমতো পরিশোধ করুন। বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতর গ্রামবাসীদের পাশে থাকবে।