জামিন খারিজ করে অনুব্রত’র ফের ৪ দিন সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ

যুগশঙ্খ, ওয়েবডেস্ক: গরুপাচার মামলায় জামিন পেলেন না বীরভূমের তৃণমূলের জেলা জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার আইনজীবীবার অসুস্থতাকে ঢাল করে আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আবেদন জানালেও তা খারিজ করে দিলেন বিচারক। সিবিআইয়ের আইনজীবী প্রভাবশালী তত্ত্ব সামনে এনে জানিয়ে দেন, কোনও মতেই সহযোগিতা করছেন না অনুব্রত, তাই তাকে আরও জেরা প্রয়োজন। জামিন দিলে তদন্তে এর প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ দু-পক্ষের সওয়াল জবান শোনার পর আদালতের বিচারক আরও চারদিন সিবিআই হেফাজতে পাঠালেন অনুব্রতকে।
এদিন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন সিবিআই আইনজীবী। ১০ দিনের হেফাজত শেষে এদিন অনুব্রত মণ্ডলকে ফের তোলা হয় আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে। আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে এদিন অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন জমা পড়ে। মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। আদালতে মেডিক্যাল ডকুমেন্টসও দেওয়া হয় অনুব্রতর আইনজীবীদের তরফে।
অনুব্রত মণ্ডল ও তার ঘনিষ্ঠদের নামে যে ফিক্সড ডিপোজিটের খোঁজ পাওয়া গেছে, আদালতে সেগুলোরও ব্যাখ্যা দেন তার আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, কিছু ফিক্সড ডিপোজিট পাওয়া গেছে। সবটাই স্ত্রীর মৃত্যুর পর জীবন বিমা থেকে পাওয়া অর্থ। যে রাইস মিলের কথা বলা হচ্ছে, সেটা শ্বশুর দিয়েছে বলে জানান অনুব্রতর আইনজীবী। এর পাশাপাশি অকশন ম্যানিপুলেশন, পশুর হাট থেকে পশু কিনে সেগুলো পাচার করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলো যথাযথ নয় বলে দাবি অনুব্রতর আইনজীবীর।
শনিবার আসানসোলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির আইনজীবী বলেন, তিনি বলেন, ‘সিবিআই বলছে ওনাকে বারবার ডাকা হলেও হাজিরা দেননি। কিন্তু উনি ইচ্ছা করে হাজিরা দেননি এমন নয়। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি।’
অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীর সাফাই শুনে বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করেন, এই রকম কো-ইন্সিডেন্স বার বার কীভাবে হতে পারে? জবাবে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, ‘এটি কোনও কো-ইন্সিডেন্স নয়। ২০১১ সাল থেকেই উনি চিকিৎসার মধ্যে আছেন। আমাদের কাছে নথি আছে সব। দুই সপ্তাহের জন্য বেড রেস্ট নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।’
তার আইনজীবীর বক্তব্য, অনুব্রতর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তার সুবিধামতো জায়গায় বাড়িতে বা কোথাও গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সিবিআই ৮ ফেব্রুয়ারি নোটিস দেওয়ার পর অসুস্থতার জন্য যেতে পারেননি। সেদিনই আবার সিবিআই নোটিস দেয় ১০ তারিখ যাওয়ার জন্য। অনুব্রতর আইনজীবীর বক্তব্য, তিনি তো বাড়ি থেকে পালিয়ে যাননি। তিনি পলাতক ছিলেন না।
অনুব্রতর আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক আবারও প্রশ্ন করেন, ‘উনি কলকাতায় কত বার গিয়েছিলেন?’ জবাবে তৃণমূল নেতার আইনজীবী জানান, শারীরিক চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন একবার।
এদিন জল খেতে চান অনুব্রত মণ্ডল। বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন শরীর ঠিক আছে কিনা? অনুব্রত বলেন,
‘শরীর আমার বরাবরই খারাপ। কালও জ্বর ছিল। কাশি আছে।’ বিচারক ফের প্রশ্ন করেন, ‘চিকিৎসকরা আপনাকে দেখছেন তো? চিকিৎসকরা আপনাকে দেখছেন তো?’ জবাবে অনুব্রত বলেন, ‘এসএসকেএম-এর ওষুধ খাচ্ছি।’ বিচারক তাকে পরামর্শ দেন, ‘কোনও অসুবিধা হলে ডাক্তারদের বলবেন।’
সিবিআই আইনজীবী বলেন, ‘সাইগল হোসেন ছিলেন অন্যতম মিডিয়েটর। অর্থ কালেকশন করতো সাইগল। সাইগল এনামুলের সঙ্গে ওনার হয়েই যোগাযোগ রাখতো। বিভিন্ন সময়ে গরু কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যাকডেটেড নথি দেখানো হয়েছে। শুরু থেকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬০-এর আওতায় নোটিস দেওয়া হয়েছিল। এর আগেও বহুবার নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে তিনি সহযোগিতা করেননি। উনি সাধারণ অভিযুক্ত নন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। অনুব্রত মণ্ডল একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।