শুভেন্দু ও মিহিরের পর এবার বিস্ফোরক মন্তব্য রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: শুভেন্দু অধিকারী ও মিহির গোস্বামীর পর এবার বিস্ফোরক মন্তব্য, করলেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। মঙ্গলবার বর্ধমানে এসে তিনি জানালেন,“তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট। সেখানে তাঁর অনুগামীদের মিথ্যা গাঁজা কেস দিয়ে জেলে পুরে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি মঙ্গলকোটে চলছে অবৈধ বালির কারবার।‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে দলেরই একাংশ এইসব কাজ করছেন বলে মন্ত্রী অভিযোগ করেন।এইসব বিষয়গুলি নিয়ে এদিন জেলা প্রশাসন ও জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে যান সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নিশানা করে এদিন এইসব বিস্ফোরক মন্তব্য করলেও একবারের জন্যও অনুব্রতর নাম তিনি মুখে আনেননি।তবে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর এদিন সাফ জানিয়েদেন, অনুব্রত মণ্ডলের ‘অনুগত’ হয়ে তিনি চলতে পারবেন না। উনি বড় খেলোয়াড়। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, তাঁকে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
এদিকে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী এমন মন্তব্য করায় উৎফুল্ল বিজেপি শিবির ।এদিন বর্ধমান দক্ষিন বিধানসভা এলাকায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন রাজ্য বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন ,“আমরা জানি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে তিনি আমাদের হয়ে এখন থেকেই কাজ করছেন কিনা জানা নেই।তৃণমূল ছেড়ে সবাই এখন বিজেপিতে যোগদান করছেন। আগামীদিন রাজ্যে বিজেপির বিরোধীতা করার মত কেউ আর থাকবে না। ”
উল্লেখ্য, বালির অবৈধ কারবার বন্ধে প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও জেলায় বালির অবৈধ কারবার যে চলছে সেই কথাই এদিন শোনা গেল মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মুখ থেকে। এদিন তিনি অভিযোগ করেন, বৈধ বালির খাদান থেকে ‘নিয়ম বহির্ভূত’ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এদিন তিনি প্রথমে জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি জেলাশাসক এনাউর রহমানের কাছেও যান। প্রশাসনের দফতর থেকে বেরিয়ে সিদ্দিকুল্লাহ সাহেব দাবি করেন, “মঙ্গলকোটে ২২টি বালি খাদান রয়েছে। বৈধ খাদান থেকে অবৈধ উপায়ে বালি তোলা হচ্ছে। একটি চালানে অনেক বালির গাড়ি যাচ্ছে। একটি বৈধ ঘাটের সঙ্গে অনেকটা এলাকা নিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বালি তোলা হচ্ছে। এছাড়াও এক জায়গার চালানে অন্য খাদান থেকেও বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই রকম ভাবে বালি তোলায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি পড়ছে।”
আরও পড়ুন- কেন্দ্রীয় সরকার ৭০ বছরের শিল্পীদের পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করছে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়
মন্ত্রী জানান, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর একযোগে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, “তিনি কোনও কাজ করতে গেলে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। বিধায়ক তহবিলের উন্নয়নের কাজ ‘আটকে’ যাওয়ার কথাও জেলাশাসকে জানিয়েছেন বলে তিনি জানান। মন্ত্রীর দাবি, “ভাল্যগ্রাম, গিধগ্রাম সহ আর একটি পঞ্চায়েতে ২০১৭ সালে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছিল। সেই অ্যাম্বুল্যান্সগুলির পরিষেবা মানুষ পাচ্ছেন না। ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি সেখান থেকে তুলে নিয়ে সরকারি সংস্থাকে দেওয়ার দাবিও প্রশাসনের কাছে তিনি রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীরা মিথ্যা গাঁজা কেসে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে আসছেন।
তিনি বলেন ,“তাঁর অনুগামীদের মিথ্যা গাঁজা কেস দিয়ে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এখনও এমন অনেকে জেলে আছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি যাদের ধরা হয়েছে তা কেউ ওই নেশার সঙ্গে যুক্ত নন। সিদ্দিকুল্লাহ সাহেব স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দল যদি তাকে ফের মঙ্গলকোটের প্রার্থী করে, তাহলে তাঁকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। তিনি কারোর অনুগত হয়ে থাকতে পারবেন না।