fbpx
পশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

একজোট হয়ে প্রতিবাদে নেমে নিম্নমানের রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করে দিল গ্রামবাসীরা

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: হাতে করে টানলেই ওঠে আসছে সদ্য তৈরি হওয়া রাস্তার পিচ ও পাথরের অস্তরণ। এমনকি রাস্তার উপর দিয়ে ট্র্যাক্টর কিংবা বাইক চালিয়ে কেউ গেলেও চাকার সঙ্গে পিচ ও পাথরের আস্তরণ উঠে চলে আসছে ।এমন নিম্নমানের রাস্তা তৈরির ঘটনার প্রতিবাদে

রবিবার স্বোচ্চার হলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মাঠনশীপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তারা রাস্তার কাজ বন্ধ করিয়ে দেন। গ্রামবাসীরা হুুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারি ওয়ার্ক অর্ডার মোতাবেক রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা প্রশাসনের কর্তারা না করা পর্যন্ত তাঁরা আর রাস্তা নির্মানের কাজ শুরু করতে দেবেন না।

কিছুদিন আগে জলপাইগুড়ির রায়গঞ্জে ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী জেলার রাস্তার কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ যে অমূলক ছিল না তা কার্যতই প্রমান হল এদিনের জামালপুরের মাঠনশীপুরের ঘটনা থেকে। রাস্তার পুনর্গঠন ও সংস্কারের জন্য কিছুদিন যাবৎ পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘটা করে ফিতে কাটার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে জেলার গ্রামীন এলাকায় রাস্তার কাজের মান নিয়ে জনমানসে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল ।

জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম মাঠনশীপুর। কৃষি প্রধান এই পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামনশীপুর থেকে রায়নার দেরিয়াপুর পর্যন্ত পাকা পিচ রাস্তা তৈরির দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে রাস্তার অনুমোদন করে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদ। গ্রামবাসীদের দাবি প্রথম থেকেই রাস্তার কাজ হচ্ছে অতীব নিম্ন মানের। সেই কারণেই গ্রামবাসিদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

মাঠনশীপুর এলাকার বাসিন্দা হারুণ মল্লিক ,সেখ সামসুল হুদা প্রমুখরা বলেন , গ্রামনশীপুর থেকে দেরিয়াপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।ঘটাকরে আবার এই রাস্তা ‘পথশ্রী ’ প্রকল্পেও তালিকা ভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই রাস্তার কাজে অনিয়ম শুরু করে ঠিকাদার সংস্থা । তারা সরকারী ওয়ার্ক অর্ডারও জনসমক্ষে আনতে চায়না ।যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে উন্নত মানের রাস্তা তৈরি হবার কথা থাকলেও রাস্তা হচ্ছে অতীব নিম্ন মানের । প্রায় বছর দেড়েক আগে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হলেও কাজে কোন গতী নেই । হচ্ছে হবে মানসিকতা নিয়ে ঠিকাদার সংস্থা রাস্তার কাজ করছে । প্রথম দফার কাজও ঠিকঠাক হচ্ছিল না। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে পরে সেই কাজ সঠিক ভাবে হয় । গত তিন দিন হল রাস্তায় পিচ ও পাথরের আস্তরণ দেওয়া শুরু হয়েছে । কিন্তু কাজ চলতে চলতেই সেই পিচ ও পাথরের আস্তরণ উঠে চলে যাচ্ছে । এমনকি হাতে করে টানলে রাস্তার পিচ ও পাথরের আস্তরণ উঠে চলে আসছে । শুধু তাই নয় । সদ্য তৈরি হওয়া রাস্তা দিয়ে ট্র্যাক্টার কিংবা বাইক চালিয়ে কেউ গেলে চাকার সঙ্গে পিচ ও পাথরের আস্তরণ উঠে চলে যাচ্ছে ।

হারুণ মল্লিক বলেন , ’রাস্তায় পিচ ও পাথরের প্রলেপ দেবার আগে ধুলো ময়লা সব পরিস্কার করেদিয়ে ‘ক্যাটানিক বিটোমিনের’ প্রাইম কোড দেবার কথা । কিন্তু সেইসব না দিয়ে ধুলোর উপরেই পিচ ও পাথর ফেলে রোলার দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই পিচ ও পাথরের আস্তরণ সব উঠে চলে যাচ্ছে । এমন নিম্ন মানের কাজ দেখে মাঠনশীপুর গ্রামের সকল বাসিন্দাই ক্ষিপ্ত ।

তাই এদিন প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ’ অপর বাসিন্দা সামসুল হুদা বলেন , ‘ লক্ষী পুজোর পর অফিস খুললে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের উচ্চ মহলে দরবার করবেন । চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকেও সবিস্তার জানাবেন । ’প্রশাসন ওয়ার্ক অর্ডার মোতাবেক ঠিক ঠাক রাস্তা তৈরির বন্দোবস্ত না করা পর্যন্ত ঠিকাদার সংস্থাকে রাস্তা তৈরির কাজ আর করতে দেওয়া হবে না বলে গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বলেন ,“ রাস্তার কাজ নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বিক্ষোভের কথা জেনেছি । তার পরেই ওই এলাকায় এসএই কে পাঠাই । গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের জন্য আমিও রাস্তার কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছি । জেলাপরিষদের ডিসট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার তাঁর মায়ের অসুস্থতায় জন্য কলকাতায় আছেন । তিনি ফিরলে রাস্তার কাজ পরীক্ষা করানো হবে । ইঞ্জিনিয়ারের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । ”জেলা পরিষদের সহ সভাধীপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন , “এলাকাবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে । প্রকৃতই রাস্তার কাজে অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ”

Related Articles

Back to top button
Close