আসানসোলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রেল কর্মীকে হেনস্থার অভিযোগ আরপিএফের বিরুদ্ধে

শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল: পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের কন্ট্রোলে কর্মরত আসানসোলের বাসিন্দা ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এক রেলকর্মী। তিনি আসানসোল ডি আরএম অফিসে আধিকারিকের কাছে যাওয়ার সময় সোমবার আরপিএফের জওয়ানদের হাতে আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ক্যান্সার আক্রান্ত সুমেশ সিং নামে ওই রেল কর্মীকে আরপিএফের জওয়ানরা মারধর করার পাশাপাশি, তার জামা ছিঁড়ে দেয়৷ সোমবার সকালের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসানসোলের ডিআরএম অফিস চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও আরপিএফের পক্ষ থেকে তাকে হেনস্তা বা মারাধর করার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই যুবক ডিআরএমের গাড়ি অফিসে বা ডিভিশনের সদর দপ্তরে ঢোকার মুখে তা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় তাকে সরাতে গিয়ে সামান্য ধস্তাধস্তি হয়েছে। মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহত ওই রেল কর্মী সোমবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান।
জানা গেছে, হাওড়া ডিভিশনের কন্ট্রোল অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর পদে কাজ করেন আসানসোলের বাসিন্দা সুমেশ সিং। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সুমেশ সিং গত সপ্তাহে আসানসোলে বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার তিনি ডিআরএম অফিস এসেছিলেন রেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো ও সিক নেওয়ার জন্য জি ৮ ফর্ম তুলতে। কিন্তু শনিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কেউ না থাকায় তিনি ফিরে যান। সোমবার সকালবেলা তিনি আবার ডিআরএম অফিসের গেটের কাছে এলে আরপিএফ তাকে আটকায়। তিনি তার পরিচয় পত্র ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী হওয়ার কাগজ আরপিএফ জওয়ানদের দেখান। আরপিএফের নির্দেশ মতো সে ডিভিশনাল অপারেশন ম্যানেজার (কোল ) রাজেশ কুমারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে অফিসের ভেতরে ঢোকার অনুমতি পান বলে তিনি দাবি করেন। এরপরেও গেটে থাকা আরপিএফ জওয়ানরা তাকে নাম, ঠিকানা , কোথায় , কেন , কার কাছে যাবে তা লিখতে বলে। তখন সুমেশ বলে আমি অতো লেখাপড়া জানিনা। আপনি লিখে দিন। আমি সই করে দিচ্ছি। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে তার সঙ্গে আরপিএফের বচসা শুরু হয়। এরপরেই আরপিএফ জওয়ানরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ।
সুমেশ বলেন, আমি ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। আমাকে চোরের মত মারছেন কেন? সেই সময় ডিআরএমের গাড়ি অফিসে ঢুকছিল। আমি তাকে অভিযোগ জানাতে গাড়ির সামনে গেলে আমাকে আরপিএফ ধরে দূরে ঠেলে দেয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালে তালিত স্টেশনে পোর্টার পদে কাজ করার সময় সুমেশের রেলে দুর্ঘটনা ঘটে। তার অভিযোগ রেল তাকে সেই সময় তেমন কোনো সাহায্য পায়নি। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে তার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা।
এই ঘটনার খবর পেয়ে ডিআরএম অফিসে আসেন আরপিএফের আসানসোল ওয়েস্ট পোস্টের ইন্সপেক্টর ধর্মেন্দ্র কুমার পান্ডে। পরে তিনি বলেন, আরপিএফের জওয়ান দের সঙ্গে ওই ব্যক্তি খারাপ ব্যবহার করেছিল। মারামারি কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর ডিআরএমের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করায় তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আরপিএফের আসানসোল ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার চন্দ্রমোহন মিশ্র বলেন, ডিআরএম অফিসে যদি অন্য কোন ডিভিশনের কোন রেলকর্মী আসেন তাহলে যার কাছে আসতে হবে তাহলে সেক্ষেত্রে তার অনুমতি লাগে। এই কাজটা করতে গিয়ে এই কর্মীর হয়তো কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে। হয়তো সেটা তার সম্মানে লেগেছে। তা নিয়ে আরপিএফের সঙ্গে তার বচসা শুরু হয়। জানতে পেরেছি আরপিএফকে সে গালিগালাজ করে। সেখানে সেই সময় ডিআরএম পৌঁছান। তখন ডিআরএমের কাছে অভিযোগ করতে যাওয়ার জন্য তার গাড়ির সামনে এসে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন আরপিএফ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। তবুও পুরো ঘটনা আমরা তদন্ত শুরু করেছি।