লকডাউন! হাড়হিম করা পরিস্থিতিতে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল পোস্টাল ইনচার্জের বিরুদ্ধে
ভীষ্মদেব দাশ, খেজুরি (পূর্ব মেদিনীপুর): বিশ্বজুড়ে করোনার থাবা। রুজি-রুটি জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঠিক সেই সময় চিটফান্ডের কায়দায় টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল খেজুরি-১ ব্লকের অজয়া পোস্ট অফিসের বিরুদ্ধে। পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহকদের পাশ বই, সার্টিফিকেট সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের চেষ্টা ও লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল পোস্টাল-ইন- চার্জ সোমনাথ মাঝির বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে টাকা নিয়ে কোনও রিসিভ বা পাস বই দেয়া হত না বলে অভিযোগ। আজ দেব, কাল দেব বলে আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে পোস্টমাস্টার ইনচার্জ। ইনচার্জ সোমনাথ মাঝি অজয়া পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার নন পোস্টাল ইনচার্জ। পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বাড়ির পাশে অর্থাৎ বীরবন্দরে অবস্থিত অজয়া ডাকঘরের পোস্টাল ইনচার্জ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় গ্রাহকরা ভরসা পেয়েছিলেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা বলে অনেকের মত। এতে ডাক বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিক জড়িত থাকতে পারেন বলেও অনুমান করছেন সাধারণ মানুষ। প্রতারণার কথা জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার বিক্ষোভ করেন প্রতারিতরা।
রাতের অন্ধকারে পোস্ট অফিসের নথিপত্র পাচার করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। পোস্ট অফিসের পাস বই সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি সরানোর সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যায় সোমনাথ মাঝির দুই বন্ধু। আধিকারিকের নির্দেশেই, সুরক্ষিত রাখতে নথিপত্র কাঁথি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন বলেই জানান তাঁরা। গ্রামবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে নিজেদের কাছে রেখেছেন। গ্রামবাসীর তরফে কন্টাই ডিভিশনের পোস্টাল সুপারেনটেনডেন্টকে খবর দেওয়া হয়েছে, থানাতেও জানানো হয়েছে। সোমবার সকালে কাঁথি পোস্টাল দপ্তর থেকে আধিকারিকরা অজয়া পোস্ট অফিসে পৌঁছান। গ্রামবাসীরা উচ্চপদস্থ আধিকারিকের হাতে আটক করা নথিপত্র তুলে দিয়েছেন। আধিকারিকরা সিজার লিস্ট তৈরি করে নথিপত্র গ্রহণ করেছেন। প্রতারিত প্রবীন গ্রাহক ইন্দুভূষণ পণ্ডা বলেন, প্রতিমাসে ৫০০টাকা জমা করি বইতে। কিন্তু হেঁড়িয়া পোস্ট অফিসে গিয়ে পাশবই আপডেট করতে দেখলাম বইগে মোট ৫০০ টাকা আছে। আধিকারিকদের কাছে গ্রমবাসীদের দাবি আমাদের টাকা উদ্ধার করে দিতে হবে।
টাকা কিভাবে ফিরে পাবো? প্রশ্ন তুলে আধিকারিকদের ঘিরে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ করেন। লকডাউনে কর্মহীন মানুষের অর্থের প্রয়োজন। আধিকারিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন। রুজিরোজগার বন্ধ। এমন সময়ে তাদের সঞ্চিত লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। ব্যাঙ্ক দূরবর্তী হওয়ায় ব্যাঙ্কে যাওয়ার সমস্যা। বীরবন্দরে অবস্থিত অজয়া পোস্ট অফিস। বীরবন্দর সহ পাশের লালগোলা, পাটনা, কন্ঠিবাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষ এই পোস্ট অফিসেই লেনদেন করতেন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পরে মানুষের ভরসা ছিল পোস্ট অফিস। বিশ্বস্থ জায়গা থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নথি ও লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল।