রাধা-গোপীনাথকে চারপ্রহর জাগালেও, করোনার কারণে রাত জাগা ও যাত্রা হল না বিদ্যানন্দপুরে

শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল: রাস উৎসবকে সামনে রেখে রাধা ও গোপীনাথকে চারপ্রহর জাগাতে প্রতি বছরই যাত্রার আয়োজন করা হয় আসানসোলের বার্ণপুরের বিদ্যানন্দপুরে। কিন্তু করোনা আবহে এই বছর বন্ধ রাখা হচ্ছে যাত্রা ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এমনকি এবারে বন্ধ রাখা হয়েছে গ্রামে রাস উৎসব উপলক্ষ্যে খাবার খাওয়ানো।
রবিবার থেকই রাস উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে বিদ্যানন্দপুরের রাধা-গোপীনাথ মন্দির। একইসঙ্গে সেজে উঠেছে রাস মন্দিরও। এক রাতের জন্য রাধা-গোপীনাথের মূর্তি ও দামোদর চন্দ্রের জিউয়ের শালগ্রাম শিলা মন্দির থেকে যায় সেখানকার রাস মন্দিরে। সারারাত ধরে চলে পুজো অর্চনা । কিন্তু গ্রামবাসীরা এবার অন্য বছরের মতো রাত জাগলেন না। হলো না যাত্রা সহ অন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। করোনার জন্য এবার নিয়ন্ত্রিত করা হয় পুজোর রীতি রেওয়াজও।
পঞ্জিকা মতে, রবিবার কার্ত্তিক পূর্ণিমায় শুরু হয় রাস উৎসব। রাস বলতে, রাতের উৎসব। সেই প্রাচীন কাল থেকে রাসযাত্রা বৈষ্ণবদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলেও বিদ্যানন্দপুরের সরকাররা মেতে ও উঠেন রাসযাত্রায়। রাধা-গোপীনাথ মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্বে রয়েছে এই সরকার পরিবার। সেই উপলক্ষ্যে দুদিনের অনুষ্ঠানও হয়। তবে তা খানিকটা অনাড়ম্বর ভাবেই। ঢুলি, ব্যান্ড, সনাতন নৃত্য, আতসবাজিতে ও আবিরে রাধা-গোপীনাথের রাস মন্দিরের শোভাযাত্রা হলেও তা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হল না এই বছর।
সরকার পরিবারের অন্যতম সদস্য মৃদুল সরকার বলেন, পুরুলিয়ার কাশীপুরের রাজারা আমাদেরকে সরকার উপাধি দিয়েছিলেন। আমাদের পদবি আসলে দাশগুপ্ত। বংশগতভাবে বিদ্যানন্দপুরের সরকাররা রাজ-কবিরাজ। এই গ্রামে জমিদারিত্ব পেয়েছিলেন সেই সূত্র ধরেই। প্রায় ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে বিদ্যানন্দপুরের রাস পূর্ণিমার উৎসব।
পরিবারের অন্য আরেক সদস্য মুরারীমোহন সরকার বলেন, আমাদের সবার এই বছর মন খুব খারাপ। অন্যবছর গুলোর মতো এবার আর করোনার জন্য জাঁকজমক ভাবে হলো না রাসপূর্ণিমা। তিনি আরও বলেন, সারা বছর ধরে রাধা-গোপীনাথের পুজো হয়। আর সেবা হয় তিনবার। বছরে একবার রাস মন্দিরে আসে রাধা-গোপীনাথের মূর্তি। সারারাত ধরে চলে চার প্রহরের পুজো।