
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: জিএসটি ঘাটতিপূরণ নিয়ে মোদি সরকারের পরামর্শকে এইভাবেই নিশানা করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র। কেন্দ্রের পরামর্শ মানলে রাজ্যেগুলোর অর্থিক স্বাস্থ্যহানি হবে বলে মনে করনে তিনি। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে বলেই দাবি করেছেন ডঃ মিত্র। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নীর্মলা সীতারমনের ‘ভগবানে মার’ মন্তব্যের পাল্টা ডঃ মিত্র বলেন এটা আসলে ‘প্রতারকের মার’। তবে তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গ একা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য-সহ যে ১৫টি রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। ওই আলোচনা আজ হতে পারে বলে ইঙ্গিত তাঁর।
বৃহস্পতিবার জিএসটি কাউন্সিলের ভারচুয়াল বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ হিসেব দিয়েছিলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে গত কয়েকমাসে জিএসটি আদায় কম হয়েছে। ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছিলেন পরিস্থিতি ‘ঈশ্বরের মার’। জিএসটির বকেয়া না মিটিয়ে তিনি রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ওই টাকা ধার বাবদ নিতে পারে। এতেই প্রবল আপত্তি তুলেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। তাঁর মতে, এই পরামর্শ দিয়ে আসলে রাজ্যগুলির আর্থিক পরিকাঠামোকে দুর্বল করে কেন্দ্রের উপর অধিক নির্ভরশীল করার চেষ্টা চলছে, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী।
অমিতের কথায়, ‘জিএসটি আদায় কোনও দৈবদুর্যোগের জন্য কমে যায়নি। কিছু মানুষ নিজেদের দেবতা ভেবে অর্থনীতিতে আগেই দুর্যোগ ডেকে এনেছিলেন। ২০১৬ সালে বিমুদ্রাকরণ কোনও দৈবদুর্যোগ ছিল না, এর ঠিক সাত মাস পরেই তড়িঘড়ি করে জিএসটি শুরু করা কোনও দৈবদুর্যোগ ছিল না। এরপরই অমিত মিত্র নোটবাতিলের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর মতে, নোটবাতিলের কয়েক মাসের মধ্যেই তড়িঘড়ি দেশজুড়ে পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি লাগু করায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী থেকে মধ্যবিত্ত মানুষজন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কমেছে জিডিপি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মত, ঈশ্বরের অভিশাপের আগেই দেশের আর্থিক ক্ষতির নেপথ্যে প্রতারণার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। যার জন্য আজ এই পরিস্থিতি বলে মনে করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
আরও পড়ুন: মাসের শেষ সাপ্তাহিক লকডাউন, শহর থেকে শহরতলি কড়া নজরদারি পুলিশের
নির্মলার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রায় সব রাজ্যই। এমনকি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে। সেটাকেই হাতিয়ার করে এগোতে চাইছেন অমিত মিত্র। এদিন তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে সব রাজ্যকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিপূরণ এড়াতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত লিখিতভাবে কেন জানানো হল না? তাহলে তো রাজ্য সরকারগুলিও আইনি মতামত নিতে পারত।’ একই সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে পঞ্জাব, কেরল আর দিল্লির অর্থমন্ত্রীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এই প্রস্তাব তাঁরা মানছেন না। একই পথে হাঁটতে পারে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও। শুধু তাই নয় প্রয়োজনের এই রাজ্যগুলি জিএসটি পরিষদ থেকে বেড়িয়ে আসার চিন্তাভাবনাও শুরু করে দিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ না মিললেই আগামী বছর দেশের বেশ কিছু রাজ্য জিএসটি পরিষদ ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারে বলে জানা গিয়েছে।