অমিত শাহ বিভাজনের রাজনীতি করছে, দাবি তৃণমূলের

অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। তোপ দাগলো তৃণমূল। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতিতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একযোগে শিলমোহর দিলেন দলের হেভি ওয়েট নেতারা। এদিন
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এবং সাংসদ সৌগত রায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের গলাতেই কার্যত একই সুর। বিভাজনের রাজনীতি প্রসঙ্গে এদিন ফিরহাদ বলেন, ‘ওনারা বিভাজনের রাজনীতির যে ফর্মুলা ভারতবর্ষে প্রয়োগ করেছেন। সেটাই বাংলায় প্রয়োগের চেষ্টা করছেন।’ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘মতুয়া বা আদিবাসীদের বাড়িতে যাওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন হবে?’ সৌগত রায় বলেন, ‘অমিত শাহের অভিযোগে স্পষ্ট উনি বিভাজনের রাজনীতি করছেন।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মতুয়া ও আদিবাসীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার করছে বিজেপি।’ অন্যদিকে সরকারিভাবে এদিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহিরাগত বলে দাবি করা হয়।
বাংলা সফরে এসে আম জনতার মন জয় করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম কাণ্ডারী অমিত শাহ। তাতেই এবার রাতের ঘুম কেড়েছে তৃণমূলের। তাই একের পর এক তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষ ধেয়ে আসছে অমিত শাহের দিকে। এদিন ফিরহাদ আরও বলেন, ‘বিজেপি খালি ধর্মের নাম ভাগা ভাগী করছে দেশ জুড়ে। কখনও গুজরাত, কখনও বা উত্তর প্রদেশ সব জায়গাতে একই চিত্র। কিন্তু বাংলায় এর ফল হবে না। অমিত শাহ যতই চেষ্টা করুক বাংলার হৃদয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা আছে।’
অমিত শাহের বঙ্গ সফরকে বিভ্রান্তির রাজনীতি বলে কটাক্ষ করেন সুখেন্দু শেখর রায়। তিনি বলেন, ‘ ধাপ্পাবাজ সরকার। গোটা ভারত দেখেছে কিভাবে দুর্বৃত্তায়নের সমর্থন করেছে বিজেপি। তৃণমূলের কাছে সব মানুষকে সমান। তাই মমতার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। গায়ের জোরে মমতা সরকার গড়ে নি। মানুষের সমর্থনে বাংলায় সরকার গড়েছে মমতা। মমতার গ্রহণ যোগ্যতা আছে বলেই তা সম্ভব।’ পাশাপাশি তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘আদিবাসী মতুয়াদের বাড়ি গিয়ে মাটির থালা বাসনে খেয়ে তিনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন। আসামে এনআরসি ও সিএএ হয়েছে। তার কি পরিণতি হয়েছে তাও মানুষ দেখেছে।’
অন্য দিকে সৌগত রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দক্ষিণেশ্বরের মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ যে অভিযোগ করেছেন তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মাত্র মুখ্যমন্ত্রী যাঁর চেষ্টাতেই কোভিড পরিস্থিতিতেও বাংলায় দুর্গাপুজো হয়েছে। পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া হয়েছে। বাংলার মানুষ এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করবে। যে খানে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ এই অভিযোগ করেছেন তিনি জানেন না রামকৃষ্ণ দেবই বলে গিয়েছেন যত মত তত পথ। অর্থাত্ সব ধর্মের সমান অধিকার রয়েছে। সেই চেতনাই তাঁর তৈরি হয়নি। দক্ষিণেশ্বরের পূন্যভূমিতে অমিত শাহের এই মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এই প্রসঙ্গে এদিন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘আদিবাসী পরিবারে আপনার নাটকীয় খাওয়াদাওয়ার থেকে হাথরসে দলিত কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন আমাদের মনে এখনও তরতাজা রয়েছে।” এরপরই অমিত শাহকে তাঁর প্রশ্ন “অমিতজি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমস্যার কথা নিয়ে আপনি কেন কিছু বললেন না?’
টুইটে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘অমিত শাহজি আপনার গোটা ভারতবর্ষের ধারণা কি আদিবাসীদের বাদ দিয়ে? তা হলে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গত বছর তাদের উপর অত্যাচারের আট হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটল কী করে? আপনারা সব ক’টি সামলাতে ব্যর্থ।’
বৃহস্পতিবার বিরসা মুন্ডার মনে করে অজ্ঞাত এক আদিবাসী মূর্তিতে মালা পড়িয়ে ছিলেন অমিত শাহ। এরপর এই শুক্রবার নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে কটাক্ষ করে তৃণমূল।
গতকাল বাঁকুড়ায় গিয়ে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মালা দিয়ে নিজের বঙ্গ সফর শুরু করবেন বলে ভেবেছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু দেখা যায় বিরসা মুন্ডার মূর্তি ভাবে এক অজ্ঞাত পরিচয় আদিবাসী শিকারির মূর্তিতে মালা দেন তিনি। কিন্তু পরে ভুল ভাঙতেই বিরসা মুন্ডার ছবি এনে ওই মূর্তির নিচে রেখে তাতে মালা দেন অমিত শাহ। এই ঘটনার পরেই শুক্রবার নিজেদের টুইটারে অমিত শাহ কে বহিরাগত বলে একহাত নিল রাজ্যের শাসক দল।
এদিন টুইটারে তৃণমূল লেখে, “আবারও বহিরাগত একই কাজ করলেন। অন্য একজনের মূর্তির পায়ের কাছে ভগবান বীরসা মুণ্ডার ছবি রেখে মাল্যদান সত্যিই অপমানকর। এই ধরণের আচরণে বাংলার সংস্কৃতি উপেক্ষিত। তিনি (অমিত শাহ) কি কখনও বাংলাকে সম্মান করবেন?” এই টুইটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ট্যাগ করা হয়েছে।