গতি বাড়িয়ে বাংলার দিকে এগিয়ে আসছে আম্ফান, মোকাবিলায় তত্পর দিঘা-কাঁথি-সুন্দরবন উপকূল
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: গতি বাড়িয়ে এবার বাংলার অভিমুখে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান।ঘূর্ণীঝড়ের অবস্থান এখন বাংলার সৈকত শহর দিঘা থেকে মাত্র ৬৭০কিমি দূরে। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে তার অবস্থান ৫২০ কিমি দূরে আর বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে আম্ফানের অবস্থান ৮০০ কিমি দূরে। এর মধ্যেই এই সামুদ্রিক ঘূর্ণীঝড়ের জেরে যেমন উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে তেমনি আজ থেকেই ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে এই রাজ্যে। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ২২০ থেকে ২৬৫ কিলোমিটার। আর উপকূলের দিকে এগোতে থাকলেই রূপ নেবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। আমফানের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা ও কাঁথি উপকূলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা। ক্ষতির আশঙ্কা গোটা সুন্দরবন এলাকারও। মহামারী আবহের মধ্যে দুর্যোগের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন সমুদ্র উপকূলের মানুষ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল এলাকার রামনগর ১, ২, কাঁথি ১, ২ এবং খেজুরি ব্লকে চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। উপকূল এলাকার ২৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জেলাশাসক বলেন, ‘করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই যাতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারেন সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, কোথাও কোনও পর্যটক নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে হবে। দিঘা থেকে হলদিয়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার উপকূল থেকে ১০ হাজার লোককে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ সারাদিন ধরে আরও বহু মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলবে। এ জন্য ৪৩টি রেসকিউ সেন্টার, ৩০টি ফ্লাড শেল্টার-সহ ২৫০টি স্কুল বিল্ডিং প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে উপকূল এলাকার ব্লকগুলোতে। পর্যাপ্ত ত্রিপল ও ত্রাণ মজুত করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির ওপর। বিদ্যুত্, পানীয়জল-সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি বিভাগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
সোমবার সকাল থেকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স এবং সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী দল দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, জলধার গ্রামগুলিতে মাইক নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করে। মহামারী আবহের মধ্যে দুর্যোগ আশঙ্কায় মানুষকে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়। নিষেধ করা হয় দুর্যোগের সময় বাড়ি থেকে না বেরোতে। প্রাণহানি রুখতে চিহ্নিত করা হয়েছে ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি এবং ঝুপড়ির বাসিন্দাদের। এলাকার সবাইকে সরিয়ে আনা হবে দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রে। সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।
আরও পড়ুন: যে কোনও পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে কেন্দ্র, মমতাকে ফোন অমিত শাহের
এর পাশাপাশি, আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুত গোটা সুন্দরবন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রকে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। তাই সুন্দরবনে আমফান দুর্গতদের প্রাথমিকভাবে স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাব থেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি প্রভৃতি জায়গায় মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানোর কাজও শুরু করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছে গেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। লক্ষাধিক মানুষকে সরাতে হবে রেসকিউ সেন্টারে। কারণ ঝড়ের তীব্রতা আগের কয়েকটি ঝড়ের থেকে যথেষ্ট বেশি থাকবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাই বহু মানুষকে উপকূল থেকে সরিয়ে আনার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। আপাতত তাঁদের রাখা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাথমিক এবং উচ্চবিদ্যালয়গুলিতে। ঝড়ের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিটি পঞ্চায়েতকে জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের যে নদীবাঁধগুলির অবস্থা খারাপ, সেগুলি দ্রুত মেরামত করার কাজও চলছে।