ভাঙ্গড়ে মৎস্যজীবী জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটির আন্দোলনে নিশানায় আরাবুল

ফিরোজ আহমেদ, ভাঙড়: জমি আন্দোলনের পর এবার মাছের ভেড়ি রক্ষা করার আন্দোলন শুরু হল ভাঙ্গড়ে। মৎস্যজীবী জীবন-জীবিকার রক্ষা কমিটির নাম নিয়েই চলছে এই আন্দোলন। শনিবার ভাঙ্গড়ের চন্ডীতলা থেকে বেওতা দু নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত মিছিল করে ভেড়ি শ্রমিকরা। মিছিলে পা মেলান শতাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ভেড়ি শ্রমিকদের অভিযোগ এলাকায় তারা ভেড়ি চালালেও ভেড়ির মাছ লুটে নিচ্ছে তৃণমূল পরিচালিত বেওতা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিরু প্রামানিক সহ তার দলবল। হিরু এলাকায় মূলতঃ আরাবুল ইসলামের অনুগামী বলেই পরিচিত। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ আরাবুল ইসলাম ই বকলমে এই ভেড়ি গুলি দখলে রেখেছে। শুধু তাই নয় প্রায় দু’বছর ধরে ভেড়ি চালানোর পরও কোনো পয়সা দেওয়া হচ্ছে না ভেড়ি শ্রমিকদের। প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছে ১০৪ জন শ্রমিক। সঙ্গে আছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও।সমস্যার সমাধান না হলে আগামী দিনে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন তিনি আন্দোলনের কমিটির নেতৃত্বরা।
বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে বেওতা দু’নম্বর পঞ্চায়েতের বড়ো আবাদ এলাকায় হাজার একরের উপরে মাছের ভেড়ি মৎস্যজীবীদের দেখভালের জন্য দেওয়া হয়েছিল। সেই ভেড়ি থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই মৎস্যজীবীরা সংসার চালাতেন। শর্ত অনুযায়ী ভেড়ির মালিকরা প্রতিদিন এই ১০৪ জন মৎসজীবি কে দুশো টাকা করে রোজ দিতেন। সঙ্গে আরও আনুষঙ্গিক খরচও। মৎস্যজীবীদের স্থায়ী মালিকানার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল সরকারিভাবে। কিন্তু সেই সমস্ত কাগজপত্র সব পুড়িয়ে দিয়ে ভেড়ি দখল করে নিচ্ছে আরাবুল ও তার অনুগামীরা। এ বিষয়ে ভেড়ি শ্রমিক কুদ্দুস গাজী বলেন, “দেনার দায়ে ভুগছে পুরো পরিবার। অর্ধেক দিন খাওয়া জুটছে না। প্রায় দুই বছর হতে চলল ভেড়ি থেকে কোনরকম আমরা টাকা পাচ্ছিনা। অথচ মাঝেমধ্যেই জাল ফেলে সমস্ত মাছ তুলে নিচ্ছে আরাবুলের অনুগামীরা।”
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে বারবার তৃণমূলের নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে মৎস্যজীবীদের তরফ থেকে। কিন্তু সেভাবে কোনও সাড়া মেলেনি। ভাঙ্গড় এর বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে মৎস্যজীবীরা দাবি করেন। কিন্তু কিছুই সুরাহা হয়নি। মৎস্যজীবী জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটির তরফ একাদশী নস্কর বলেন, “প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি। আগামী দিনে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে আন্দোলন চলবে। শুরু করা হবে আমরণ অনশন কর্মসূচি।”
আরও পড়ুন: ‘দেশ রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগোচ্ছে’, হাথরাসে প্রতিবাদে পথে নেমে বললেন মমতা
এর আগে অবশ্য ভাঙ্গড়ে কৃষিজমি জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটির আন্দোলন শুরু হয় পাওয়ার গ্রিড কে কেন্দ্র করে। তারপর তা অন্য মাত্রা পায়। আন্দোলনের ফলে প্রাণ হারান একাধিক আন্দোলনকর্মী সহ তৃণমূল কর্মীরা। বর্তমানে সেই আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও নতুন করে শুরু হয়েছে মৎস্যজীবী জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটির আন্দোলন। লক্ষ্য একটাই আরাবুল ইসলাম ও তার অনুগামীরা। এ বিষয়ে অবশ্য আরাবুল ইসলাম বলেন, “তৃণমূলের একটা অংশ সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভেড়ি শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”