যুদ্ধ শেষ,অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি আর্মেনিয়া

মস্কো ও ইয়েরেভান: নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল, অবশেষে তার অবসান ঘটেছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুটি দেশই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে। এই চুক্তিতে সই করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশনিয়ান এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। এমনকী, সোমবারের এই চুক্তিতে ইয়েরেভান অধিকৃত অঞ্চল থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আর্মেনিয়া।
একইসঙ্গে চুক্তিতে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন যে, আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আজারবাইজানকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেবে আর্মেনিয়া। এছাড়া আরও কিছু অঞ্চল ছাড়া হবে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলে রাশিয়া ফেডারেশন ১৯৬০ জনের একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করবে এবং তাদের কাছে ক্ষুদ্রাস্ত্র ও ৯০টি আর্মর্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার, ৩৮০টি অটোমোবাইল এবং বিশেষ সরঞ্জাম থাকবে।
তবে, ইয়েরেভানের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আর্মেনীয় নাগরিকরা। তারা একে পরাজয় বলে বিবেচনা করছেন। জানা গেছে, সোমবার সন্ধার সময় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশনিয়ান যুদ্ধ সমাপ্তি ঘোষণা দেওয়ার পরেই বিক্ষুব্ধ লোকজন রাজধানী ইয়েরেভানে বিক্ষোভ করেন। এমনকী তারা বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে ভাঙচুর করেন। তবে,যুদ্ধ অবসানের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী পাশনিয়ান বলেছেন,যুদ্ধবিরতির এই চুক্তিকে পরাজয় হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন: বিহারে মোদি ম্যাজিকের জয়… গদিতে ফের নীতীশ কুমার
উল্লেখ্য,এর আগেও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় নাগোরনো-কারাবাখে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া। কিন্তু উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রাখে। যার ফলে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়ে। এদিকে ইতিহাস বলছে, নাগার্নো-কারাবাখ হচ্ছে ৪ হাজার ৪শ বর্গ কিলোমিটার(১ হাজার ৭০০ বর্গ মাইল) আয়তনের একটি পর্বতাঞ্চল। যেখানে ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান এবং মুসলিম তুর্কদের আবাসস্থল। তবে এই অঞ্চলটি একটি বিবাদপূর্ণ ছিটমহল হিসাবে পরিচিত। যে অঞ্চলটিকে ঘিরে ১৯৮৮-১৯৯৪ সালে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এবং নিহত হন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পরে ১৯৯৪ সালে দুই দেশ অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছালেও সময়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর চলমান সেই উত্তেজনায় এখন নিহতদের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন দুই দেশের অসহায়, নিরাপরাধ শিশু ও নারীরা।