করোনা আবহে যাত্রীর অভাবে মার খাচ্ছে শিলিগুড়ি সহ সংলগ্ন অঞ্চলের আটো ব্যবসা, বিপাকে চালকেরা

কৃষ্ণা দাস, শিলিগুড়ি: যাত্রী নেই পথে। ফলত, করোনা আবহে পথেই বসে মার খাচ্ছে ব্যবসা। দু, চারজন যাত্রী হলেও বর্ধিত মূল্যে তেলের দামই উঠছে না শিলিগুড়ি সহ পার্শবর্তি অটো রিক্সাগুলির। তাতে মহা সমস্যায় দিন গুজরান করতে হচ্ছে আটো চালকদের।
ধীর গতি হলেও, সার্বিক পরিস্থিতির পেক্ষিতে হোস ফিরছে সাধারণ মানুষের। সরকারি ঘোষণায় গোটা দেশে আনলক পর্ব চললেও করোনা মহামারির আতঙ্কে সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে একে অপরের সংস্পর্শ থেকে। মাঝে কিছুটা বেপরোয়া হলেও, ফের জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে বহু মানুষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে চাইছে না অধিকাংশই। অটো টোটো বাস এড়িয়ে অল্প দুরত্ব পায়ে হেটে নয়ত সাইকেল বা মোটর সাইকেল নিয়ে যাতায়াতটাই সুরক্ষিত মনে করছে সাধারণ। যারফলে শিলিগুড়ি শহরের একদিকে বাস মালিকরা যেমন যাত্রীর অভাবে মাত্র ১০ শতাংশ বাস রাস্তায় বার করেছে তাও প্রায় যাত্রীশূন্য।
অটোর অবস্থাও সেই তথৈবচ। যাত্রী শূন্য নচেৎ এক কিংবা দুজন যাত্রীর ওপর ভরসা করেই তীর্থের কাকের মত বসে থাকতে হচ্ছে রাস্তার ধারে। গোটা দিনে কয়েকঘন্টা বসে থাকার পরও দু-চারজন যাত্রী মেলাও সমস্যা হয়ে উঠেছে। তার ওপর আরেক বিপত্তি হল পেট্রোল ডিজেলের মুল্য বৃদ্ধি। ব্যাস মাথায় হাত যানবাহন ব্যবসায়ী সহ তার চালকদের। এমতাবস্থায় চালকের মাইনে দেওয়া, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, এসব করতে গিয়ে প্রাণপাত হওয়ার উপক্রম। চালকদের অবস্থায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত।
শিলিগুড়ির ভেনাস মোড় থেকে শালুগাড়া ও অন্যদিকে ফুলবাড়ি থেকে শালুগাড়া পর্যন্ত যাতায়াতকারী অটো সহ শিলিগুড়ি শহরের সর্বত্র একই চিত্র। ভেনাস মোড় থেকে শালুগাড়া এই রুটে মোট ৪০টা অটো যাতায়াত করে। করোনা আবহে ৩০টার মতো অটো রাস্তায় নেমেছে তাও ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীর প্রতিক্ষায় ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে ফুলবাড়ি থেকে শালুগাড়া যাতায়াত করে প্রায় ৬০ টা অটো সেখানেও ৪০ টার মতো অটো রাস্তায় নেমেছে। ভেনাস মোড়ের অটো চালক সুমন মোদক, আনন্দ মল্লিকরা জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন তেল খরচ বাদ দিয়ে, মালিকে ৫০০ টাকা দিয়েও নিজেদেরও পকেটে প্রায় ৫০০ টাকা থাকত। কিন্তু একদিকে তেলের দাম বেড়েছে অন্যদিকে প্রায় যাত্রী শুন্য তাতে দিনে ১০০ টাকা কোনোরকমে আয় হয়। মালিককে দিতে হয় ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে বাম কং জোটের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন শাসকদল প্রদীপ ভট্টাচার্য কংগ্রেস সাংসদ
অন্যদিকে সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যেই রাস্তায় আর অটোর দেখা পাওয়া যায় না। সারাদিন যাত্রীর প্রতিক্ষায় থেকে হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী পাওয়ার পর এমনিতেই তাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। তাই আগে যেখানে রাত ন’টার সময়ও অটো পাওয়া যেত এখন পাঁচটা থেকেই অটোর সংখ্যা কমতে কমতে ছটার মধ্যেই অটোর দেখা মেলে না। অথচ কিছুদিন আগের চিত্রটা ছিল সম্পুর্ণ অন্যরকম। অটো গুলোতে থাকতো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি যাত্রী। ট্রাফিক পুলিশকেও বারবার নিতে হয়েছে কড়া পদক্ষেপ। আর এখন যাত্রীর আশায় অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই । এখন তাই সকলের মনে একটাই প্রশ্ন একাল-সেকাল কলিকাল গিয়ে এ কোন কাল চলে এল। তবে কি এর নামই করোনা কাল। এই করোনা কালের হাত থেকে মুক্তির প্রতিক্ষায় দিন গুনছে রাজ্যবাসী সহ শিলিগুড়ির দিন আনা দিন খাওয়া সাধারণ মানুষেরা।