প্রকৃতির রোষে তছনছ হয়ে গিয়েছে গোবর্ধনপুর

বিশ্বজিৎ হালদার, গোবর্ধনপুর (পাথরপ্রতিমা): ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সুন্দরবন। তারপর মাত্র মাস তিনেকের ব্যবধান। সুন্দরবনের প্রান্তিক দ্বীপ পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর। আমফানে পর আবার তছনছ হয়ে গিয়েছে ওই দ্বীপ। ভরা কোটালের জলোচ্ছাসে বাঁধের দফারফা হয়ে গিয়েছে।
বসতবাড়ি, ধানের জমি, পুকুর, সবজির খেত। ভেঙে পড়েছে বাঁধ। কংক্রিটের বাঁধেও ফাটল দেখা দিয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ষাঁড়াষাড়ির কোটাল। সেই কোটালের আগে ঘুম উড়েছে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের।
আমফানের পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করছিলেন উপকুলের প্রান্তিক মানুষেরা। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টি আর অমবস্যার কোটালের প্রবল জলোচ্ছাসে বঙ্গোপসাগরের বাঁধ ভেঙে নতুন করে নোনা জলের প্লাবনে ঘুম উড়েছে গোবর্ধনপুরের বাসিন্দাদের।
সূত্রের খবর, এই দ্বীপটিতে ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় করে গোবর্ধনপুরের পাশ দিয়ে গা ঘেঁষে পূর্ব দিকে মোট ৬০০ মিটার ও দক্ষিণে ১২০০ মিটার কংক্রিটের বাঁধ তৈরীর কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছিল। পাশাপাশি এই দুই বাঁধের মাঝে আরও প্রায় ৭০০ মিটার ইটের ব্লক বসানো মাটির বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির রুদ্র রোষে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিতে উত্তাল বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় মাটি ও কংক্রিটের বাঁধের বেশ বড় অংশ ভেঙে ও উপচে চাষের জমিতে জল ঢোকে।
জীবন জীবিকা এখন বিশবাঁও জলে। আয়লার পর আবারও বিঘের পর বিঘে চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে পড়ায় মাথায় হাত চাষিদের। নোনা জল ঢুকে পড়ায় আগামী কয়েক বছর ওই জমিতে চাষ বন্ধ রাখতে হবে বলে চাষিদের আশংকা। ওই জমির মাটির নোনাভাব কাটার পরেই আবার ফসল ফলানো সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্বের গোবর্ধনপুরের গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েছে নোনা জল। জমা জলে ভেঙে পড়েছে বহু কাঁচা বাড়ি। আগামী ১লা সেপ্টেম্বর আবারও পূর্ণিমার কোটাল।
এই কোটালটি ষাঁড়াষাঁড়ির কোটাল নামে সুন্দরবনের মানুষের কাছে পরিচিত। দুর্যোগের এক সপ্তাহ কাটলেও সমুদ্র বাঁধের ভাঙন মেরামত শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে দ্বীপের বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে মাথার ছাদ হারিয়ে পূর্ণিমার কোটালে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কায় উৎকন্ঠার প্রহর গুনছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।