প্রেমিকা আকাঙ্খা শর্মাকে খুন করে পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন উদয়নের
'আমার কোনও আফসোস নেই', যাবজ্জীবনের সাজা শুনে নির্লিপ্ত উদয়ন

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেমিকা আকাঙ্খা শর্মাকে নৃশংস খুনের দায়ে উদয়ন দাসকে যাবজ্জীবন সাজা দিল আদালত। বুধবার বাঁকুড়া আদালত ওই ‘সাইকো কিলার’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। প্রায় সাড়ে তিন বছর মামলা চলার পর তাঁকে দোষীসাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। যদিও সাজা শোনানোর পরও নির্বিকার উদয়ন। সে জানায়, তার কোনও আফশোস নেই। পুলিশ ভ্যান করে যাওয়ার সময় বলে, ‘আমার কোনও আফসোস নেই। এ বার হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাব।’
২০১৭ সালে বাঁকুড়ার বাসিন্দা আকাঙ্ক্ষা শর্মা (২৮)-এর দেহ পাওয়া যায় ভোপালের সাকেত নগরে প্রেমিকের বাড়িতে একটি সিমেন্টের বেদির নীচে। এই ঘটনায় পরে গ্রেফতার হয় উয়দন দাস। খুন, অপহরণ, দেহ ও তথ্য লোপাটের মামলার দোষী সাব্যস্ত হয় সে। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, খুনের ঘটনায় উদয়ন দাসকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও ২ বছরের জেল। তথ্য লোপাটের ঘটনায় ২ বছরের জেল। ২ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। উদয়নের আইনজীবী জানান, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। আকাঙ্ক্ষার পরিবার জানিয়েছে, তাঁরা ফাঁসির সাজা চাইছিলেন। কিন্তু আদালতের রায়কে সম্মান জানাতে হবে।
বাঁকুড়ার রবীন্দ্রসরণির বাসিন্দা ছিলেন ব্যাংক আধিকারিকের মেয়ে আকাঙ্ক্ষা। ২০১৬-র ২৩ জুন ইউনিসেফের কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। বাড়িতে প্রেমিকের দেওয়া ভুয়ো নিয়োগপত্র দেখিয়েছিলেন তরুণী। এরপর ১৫ জুলাই ভোপালের সাকেতনগরে প্রেমিক উদয়নের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর প্রেমিকের সঙ্গে বচসা বাঁধে। কথা কাটাকাটির মাঝে প্রেমিকাকে গলা টিপে খুন করে উদয়ন। তারপর বাড়িতে থাকা লোহার টিনের বাক্সে সে প্রেমিকার দেহ ঢুকিয়ে দেয়। উপরে সিমেন্টের বেদি বানিয়ে দেয়।ধরা পড়ার পর সে স্বীকার করে বাবা-মাকেও সে খুন করেছে।
আরও পড়ুন: গরুর শরীরে চাকা চাকা ঘা, অসম জুড়ে নতুন রোগের আশঙ্কা
এহেন সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাসকে বাঁকুড়া আদালতে পেশ করে মামলা শুরু হয়। বাঁকুড়ার বাসিন্দা আকাঙ্খা শর্মার নিখোঁজ হওয়া থেকে নৃশংস খুন করে মেঝেয় দেহ পুতে দেওয়ার ঘটনায় মূল মামলাটি বাঁকুড়া থানাতেই হয়। সেই মামলায় বাঁকুড়া আদালত এতদিন পর রায় শোনাল।
সাইকো কিলার উদয়ন দাসের বিরুদ্ধে আকাঙ্খার পরিবারের অভিযোগ ছিল, তাঁদের মেয়ে স্বেচ্ছায় চলে যায়নি, তাঁকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। তারপর মধ্যপ্রদেশের সাকেতনগরে নিজের বাড়ির মেঝেতে দেহ পুতে দেয় উদয়ন। আকাঙ্খার দেহ উদ্ধারের পর গ্রেফতার হয় উদয়ন। তাকে দফায় দফায় জেরায় পুলিশের কাছে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। উদয়ন জেরায় স্বীকার করেছে, সে শুধু আকাঙ্খাকেই নয়, নিজের বাবা-মাকেও খুন করে পুতে দিয়েছে। রায়পুরের বাড়ির মেঝেত বাবা-মার দেহ পুতে দেওয়ার পর দীর্ঘদিন বাবাকে ফেসবুকে জীবিত রেখেছিল সে। ফেসবুকে গড়ে তুলেছিল রূপকথার সাম্রাজ্য। নিজেকে একজন মার্কিন গবেষক বলে পরিচয় দিয়েছিল সে। ফেসবুকে তাঁর ফেক প্রোফাইলে নিজেকে মস্কো-প্যারিসের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিত উদয়ন। মোট ছ’টি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ।