fbpx
কলকাতাগুরুত্বপূর্ণপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

মঙ্গলবার থেকেই ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’-এর মাধ্যমে মিলবে রাজ্য সরকারের সেরা ১০ প্রকল্পের সুবিধা 

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের ক্ষোভের ওপর ভিত্তি করে বিরোধীরা রাজনৈতিক জমি তৈরি করার আগেই সক্রিয় রাজ্য প্রশাসন। বাঁকুড়া সফর সেরে মুখ্যমন্ত্রী ফেরার পরেই ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সমস্ত সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ফেলল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকেই রাজ্য সরকারের বিশেষ ১০ টি প্রকল্পের সুবিধা কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে, তার বিস্তারিত বিবরণ মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে।
‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের জন্যে যে ১০টি প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হল, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, জাতিগত শংসাপত্র দান, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, রুপশ্রী, ঐক্যশ্রী, জয় জোহর, তফশিলি বন্ধু, ১০০ দিনের কাজ-এর মত ১০ টি প্রকল্প। জেলায় জেলায় সব প্রকল্পের প্রধান দায়িত্বে থাকবেন জেলাশাসক। মোট ৪ ভাগে হবে এই প্রকল্পের কাজ।‌সম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজ ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারি মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ভাগের কাজ হবে ১ থেকে ১১ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় ভাগের কাজ হবে ১৫-২৪ ডিসেম্বর। তৃতীয় ভাগের কাজ হবে নতুন বছরের শুরুতে ২ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। চতুর্থ ভাগের কাজ হবে ১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি অবধি। ৪ দফায় ২০ হাজার শিবির খোলা হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কবে কোথায় ক্যাম্প বসবে তা আগে ভাগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বসবে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’-এর ক্যাম্প। এমনকি ঘোষণা মত ক্যাম্প বসবে গ্রামীণ এলাকাতেও। ক্যাম্পগুলি বসানো হবে স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি হল, গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। সেই ক্যাম্পে গিয়ে মানুষ অভাব অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। সেই কাজ দ্রুত দফতরের মাধ্যমে করে দেবেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তবে শুধু গ্রামে নয়, শহরের মানুষও পাবে “দুয়ারে দুয়ারে সরকার” প্রকল্পের সুবিধা। প্রত্যেক পুর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ক্যাম্প অফিস খোলা হবে। রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা ছাড়াও পুর পরিষেবা সংক্রান্ত একাধিক অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তি থেকে করিয়ে নিতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
রাজ্য সরকারের প্রকল্প গুলির সুবিধা সাধারণ মানুষ কিভাবে পাবেন, তা এদিন স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
১। স্বাস্থ্য সাথী: নগদ বিহীন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর এবং পুর ওয়ার্ড স্তরে আয়োজিত ক্যাম্পে এসওপি নিয়ে আসতে হবে। প্রথম রাউন্ডে কেউ এসওপি নিয়ে এলে দ্বিতীয় রাউন্ডেই কার্ড পেয়ে যাবেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে এসওপি দিলে তৃতীয় রাউন্ডে কার্ড পাবেন।
২। জাতিগত শংসাপত্র: এই প্রকল্পটির মাধ্যমে তফসিলি জাতি/উপজাতি/ এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য জাতিগত শংসাপত্র প্রদান করা হবে। সাধারণ সময়ের থেকে অনেক দ্রুত মানুষ এখানে শংসাপত্র পাবেন।
৩ এবং ৪.- জয় জোহর এবং তফসিলি বন্ধু প্রকল্প:
এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর এবং অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে শিবির থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তফসিলি জাতি ও উপজাতি মানুষদের জন্য ‘তফসিলি বন্ধু পেনশন প্রকল্প’-এ নাম নথিভুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাতা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।
৫। খাদ্য সাথী 
খাদ্য সাথী সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার জন্য এই ক্যাম্পে আবেদন করতে হবে। নাম ঠিকানা সংশোধন করা হবে। কুপন থেকে কার্ডে রূপান্তরিত করার জন্য ভিন্ন উপায়ে আবেদন করতে হবে। যাঁদের রেশন কার্ড নেই, কুপনের মাধ্যমে রেশন পান, তাঁদের রেশন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নাম, ঠিকানা-সহ এই শিবিরে ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
৬। শিক্ষাশ্রী: আগে থেকেই ঐক্যশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তি পান। ইতিমধ্যেই ৪৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে সংখ্যালঘু বৃত্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। এবার শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে অনগ্রসর শ্রেণী, তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন।
৭। কন্যাশ্রী: এই প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছে। তাই এই প্রকল্পে কাজ যাতে না আটকায়, তার জন্য কোনও ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে এই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। এছাড়াও কেউ এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকলে তিনি আবেদন করতে পারবেন।
৮। রূপশ্রী: এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট বয়সের পর বিবাহের জন্য কন্যাকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। এই রূপশ্রী প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে ক্যাম্পে আসতে হবে। লকডাউন এর আগে যারা এই প্রকল্পে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন, তারা এখন বিবাহের জন্য মনস্থির করলে তাদের আর্থিক সাহায্য মঞ্জুর করা হবে।
৯। কৃষক বন্ধু প্রকল্প: এই প্রকল্প সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা, যেযমন পরচা, নথিভুক্ত করণ ইত্যাদি যে কোনও সমস্যায় ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা সাহায্য করবেন। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যে কৃষকদের নাম নেই, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া শিবিরে থাকা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসারদের কাছে পরচার রেকর্ড সংশোধন করতে পারবেন কৃষকরা।
১০। ১০০ দিনের কাজ এবং জব কার্ড সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে সাহায্য করা হবে। কোথাও নাম নথিভুক্তকরণের সমস্যা থাকলে তার সমাধান করা হবে এবং সকলে যাতে কাজ পান তা নিশ্চিত করা হবে।
মুখ্য সচিব আরও জানান, এই কর্মসূচিটিকে জেলা এবং ব্লক স্তরে সফলভাবে রূপায়ণ করার জন্য  একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়ে তোলা হবে। শীর্ষ আইএএস আধিকারিকরা নোডাল অফিসার হিসেবে কাজ করবেন এবং বিডিওদের ক্যাম্প পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে সাধারণ মানুষ কতটা অংশগ্রহণ করছেন  এবং  তাদের অভাব-অভিযোগের কতটা সমাধান হয়েছে সেই ব্যাপারেও নজর রাখবেন নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকরা। যে কোন প্রকল্পের আবেদনে কোন সরকারি আধিকারিকের কোনরকম ঢিলেমি বরদাস্ত করবে না রাজ্য প্রশাসন।

Related Articles

Back to top button
Close