বিজয়া দশমীর পর শুরু ভান্ডানী পুজো

সুকুমার রঞ্জন সরকার, কুমারগ্রাম: ষষ্ঠী থেকে নবমীতিথিতে পুজো নিয়ে দশমীর দিন দেবী দুর্গা যাত্রা করেন পতি গৃহ কৈলাসে। কিন্ত উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজ মেয়ে রূপী দুর্গাকে বিদায় না জানিয়ে শুরু করেন আরও তিনদিনের পুজা। তবে দেবী এখানে দুর্গা রূপে পুজিতা হন না, পুজিতা হন ভান্ডানী দেবী রুপে।
বিজয়া দশমীর পরদিন একাদশী তিথি থেকে ভান্ডানি দেবির পুজা শুরু হয়। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার আদি বাসিন্দা রাজ বংশী সমাজে ভান্ডানী দেবীর পুজা বহুদিন ধরে প্রচলিত। এলাকা ভেদে দেবী ভিন্ন ভিন্ন নামে পুজিতা হন। কোথাও ভান্ডারনী, কোথাও ভান্ডানী, কোথাও বনদুর্গা আবার কোথাও বনদেবী আবার কোনও কোনও অঞ্চলে ডাংধারী মাও (লাঠি ধারী মা) রূপে পুজিতা হন। রাজবংশী ভাষায় লাঠি কে বলা হয় ডাং আর মাও হল মা।
এই পুজোর প্রচলন সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়না। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন লোকশ্রুতি জড়িয়ে রয়েছে এই পুজো বিষয়ে। তবে পুজো প্রচলনের মুল বিষয়টি এক। তা হল দেবি দুর্গার তিনদিনের পুজো তে অনেক সাধারন মানুষ অংশ গ্রহন করতে পারতেননা সম্ভবত সমাজে বর্ন ভেদ প্রথা চালু থাকায়। দশমীর দিন দুর্গা যখন কৈলাসের পথে যাত্রা করেছেন তখন পুজো দিতে না পারা সাধারন মানুষ দেবীর পথ আটকে প্রার্থনা জানায় তাদের পুজো নিয়ে যেতে। দেবী তাদের বলেন দশমী চলে গেছে তাই দশভূজা রুপে তিনি পুজো নিতে পারবেন না। দেবি তখন চতুর্ভূজা রুপে অন্য দেবীর ভান ধরেন তাই দেবীর নাম হয় ভান্ডানী। দেবী সিংহ বাহনা চতুর্ভুজা রুপে আবার কোথাও ব্যাঘ্রবাহনা চতুর্ভুজা রুপে পুজিতা হন। লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ এবং মহিষাসুর দেবির সাথে থাকেননা। একক মুর্তি তেই দেবির পুজো হয়। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের একান্ত নিজস্ব এই পুজো বর্তমানে সব সম্প্রদায়ের মানুষের অংশ গ্রহনে সার্বজনিক রুপ পেয়েছে। দেবী ভান্ডানী উত্তরবঙ্গের লৌকিক দেবী রুপে হয়ে উঠেছেন লোক সংস্কৃতির ধারক।