শরণানন্দ দাস, কলকাতা: এমনই এক বাইশে শ্রাবণ সেদিন… ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। সেই বৃষ্টিঝরা দুপুরে ১২ টা ১৩ মিনিটে অস্তাচলে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। আর তাঁর শেষ যাত্রায় ধারাবিবরণী দিয়ে বাংলাকে কাঁদালেন আর একজন দিকপাল বঙ্গসন্তান। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রপাঠ ও গ্রন্থনার জন্য যে নামটি বাংলার শারদোৎসবের সঙ্গে একীভূত হয়ে গিয়েছে।
আজ থেকে ৭৯ বছর আগের সেই ২২ শ্রাবণ সকাল থেকেই কবির শরীরের অবস্থা ক্রমশই খারাপের দিকে। সেযুগে ইন্টারনেট, মোবাইল দূরস্থান, টেলিভিশনও ছিল না । ছিল শুধু রেডিও। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের স্টেশন ডিরেক্টর নির্দেশ দেন প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর কবিগুরুর খবর সম্প্রচার করতে হবে। সেই নির্দেশমতো নলিনীকান্ত সরকার গেলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর কবিগুরুর শারীরিক অবস্থার খবর ফোন করে রেডিও স্টেশনে পাঠাতে লাগলেন।আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ঘোষণা করে চললেন কবিগুরুর শারীরিক অবস্থার খবর। ইথার তরঙ্গে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়তে গেল সেই খবর।
সব কোলাহল থেমে গেল দুপুর ১২ টা ১৩ মিনিটে। অনন্তলোকে যাত্রা করলেন রবীন্দ্রনাথ। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ স্থির করলেন কবিগুরুর অন্ত্যেষ্টির ধারাবিবরণী প্রচার করবে। সেদিন রেডিও স্টেশনে হাজির ছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম। কবির উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন, ‘দুপুরের রবি ঢলে পড়েছে অস্তপারের কোলে।’ আরও একটি কবিতায় শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি। কবিতাটি হলো- ‘ ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত কবিরে ,জাগায়ো না, জাগায়ো না/ সারাজীবন যে আলো দিল, ডেকে তাঁর ঘুম ভাঙায়ো না।’
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লক্ষ ছুঁতেই মোদি সরকারকে কটাক্ষ রাহুলের
অন্যদিকে নিমতলা মহাশ্মশানে যখন রবীন্দ্রনাথের শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অশ্রুসিক্ত কণ্ঠ ভেসে এলো রেডিওতে ‘ঠাকুরবাড়িতে বেশিক্ষণ শবদেহ রাখার রীতি নেই বিশেষত মধ্যাহ্নে যিনি প্রয়াত হয়েছেন বিকেলের মধ্যেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতেই হবে।’ কবিগুরুর পার্থিব শরীর যখন পঞ্চভূতে লীন হচ্ছে তখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মন্দ্র উচ্চারণে বলছেন, ‘ ওপারে দূরের ওই নীলাকাশে অস্তগামী সূর্য শেষ বিদায়ের ক্ষণে পশ্চিম দিগন্তে ছড়িয়ে দিল অগ্নিবর্ণ রক্তিম আভা, আর এপারের এই পৃথিবীর বুকে বহ্নিমান চিতার লেলিহান অগ্নিশিখায় পঞ্চভূতে বিলীন হলো এক মহাপ্রাণের পূত পবিত্র শরীর। রবি গেল অস্তাচলে,,’। শোকের আঁধার নামলো বাংলায়।