‘জমি-জেহাদের’ শিকার দলিত হিন্দু পরিবার, পাশে দাঁড়ালো বিজেপি

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা দক্ষিণ শহরতলীর সংখ্যালঘু অধ্যষিত এলাকা মেটিয়াবুরুজে। এখানেই গত ৭ জন্ম ধরে পরিবারকে নিয়ে বাস করছেন ৮৫ বছরের কার্তিক দাস। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকাতে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা নিপীড়ত হয়ে চলেছেন কার্তিক বাবু এবং তার পুরো পরিবার। কিন্ত বেশ কয়েকদিন ধরে তার একমাত্র সম্বল তার বাড়ি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে এলাকার দুষ্কৃতী বাহিনী। কার্তিক বাবু বহু বার পুলিশি সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্ত ওই এলাকার পুলিশ পুরোপুরি ভাবে ওই এলাকার শাসক দলের গুন্ডাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এক প্রকার দিশেহারা কার্তিক বাবু।
বর্তমানে কার্তিক বাবুর পরিবার প্রায় ভিটেহারা হয়ে পড়েছে, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অঙ্গুলিহেলনে প্রতিনিয়ত তাকে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, এমনকি কয়েকজন প্রাণে মেরে দেওয়ার মতো হুমকিও দিয়েছে বিগত কয়েকদিনে।
বিষয়টা সম্বন্ধে জানতে পারেন বিশিষ্ট আইনজীবী সুতপা মাইতি এবং দক্ষিণ কলকাতা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার দাপুটে নেতা রাজীব দত্ত চৌধুরি। তৎক্ষণাৎ তারা পৌঁছে যান ওই পরিবারের কাছে। সেখানে গিয়ে তারা এলাকার মানুষদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন এসবের পেছনে আছে সেখানকার ভূ-মাফিয়া মহাম্মাদ মুমতাজ যে কিনা আবার কলকাতা পৌরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ববি হাকিম এবং বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লার ঘনিষ্ট।
কার্তিক বাবু গতকাল রাজীব দত্ত চৌধুরী এবং সুতপা মাইতির নেতৃত্বে যে ছয়ে সদস্যের দল তার সাথে দেখা করতে গেছিলো তাদের বলেছেন যে এলাকার পুলিশ সবকিছু জানার পরও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে প্রতিদিন একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে এবং রাত কাটাতে হচ্ছে অন্ধকারে। কার্তিক বাবু তাদের আরো জানান এলাকার মাফিয়া মুমতাজ এবং তার স্ত্রী মুমতাজ বেগম তাদের বাড়ির নকল দলিল পর্যন্ত প্রশাসকদের দেখিয়ে যেকোনো দিন তাদের বাড়ির দখল নিতে পারে। গতকাল প্রায় ৩ ঘন্টা ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে সময় কাটান রাজীব বাবুরা।
মেটিয়াবুরুজের ওই এলাকা থেকে বেরোনোর আগেই সংবাদমাধ্যকে তিনি বলেন,”মহম্মাদ মুমতাজের গুণ্ডাবাহিনীর নেতৃত্বে এই এলাকাতে জমি-জেহাদ চলছে, পুরো এলাকার হিন্দু বসবাসকারীদের মানবধিকার হনন করা হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতির স্বার্থে হাথরাসে নাটক করতে যেতে পারেন কিন্ত তাঁর নিজের রাজ্যের হতদরিদ্র দলিত হিন্দু পরিবারদের তিনি সুরক্ষা দিতে পারেন না !” রাজীব বাবু আরো বলেন পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের বসবাস দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া ভালো’ এহেন সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের ফলে হিন্দুরা অস্তিত্বসংকটে ভুগছে।
এবিষয়ে আইনজীবী সুতপা মাইতি কে জিজ্ঞাসা করা হলে উনি বলেন,”কার্তিক বাবুর পরিবারকে সমস্ত রকম আইনি সাহায্য করতে আমরা বদ্ধপরিকর।” তিনি আরো জানান এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসার পর যদি এই পরিবারের কোনো রকম ক্ষতি হয়ে তাহলে তার দায়ে সরাসরি ওই এলাকার মাফিয়া মহম্মাদ মুমতাজ এবং প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। সুতপা দেবী বলেন এই ঘটনাটি নিয়ে তারা রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এবং কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে লিখিত নালিশ জানাবে এবং কার্তিক বাবুদের পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে, জনমত গঠন করে বৃহত্তর আন্দোলনও করা হবে। এদিন মেটিয়াবুরুজ এলাকাতে কার্তিক বাবুর পরিবারের সাথে এছাড়াও দেখা করেন বিজেপির লড়াকু নেতা সুরজ কুমার সিংহ, বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা উৎপল ভট্টাচার্য, দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির যুব কমিটির সদস্য জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় এবং দক্ষিণ কলকাতার লড়াকু বিজেপি নেতা রাজেশ ঝা। এই রাজ্যে দলিত হিন্দুদের যে কি দুর্দশা তার প্রকৃত প্রতিফলন হচ্ছিল কার্তিক বাবুর প্রত্যেকটি অশ্রুধারার সঙ্গে।