ছন্দে ফিরছে বইপাড়া, প্রকাশিত হুমায়ুন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার থেকে পল্লবী সেনগুপ্তের নতুন বই

শরণানন্দ দাস, কলকাতা: শহর কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া। বরেণ্য সাহিত্যিক, প্রকাশকদের যৌথ প্রয়াসে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে অমূল্য সব সৃষ্টি। আর কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া হল সেই সৃষ্টির সুতিকাগার। অথচ করোনার আঘাতে প্রায় তিনমাস থমকে ছিল সৃজনশীলতা। লকডাউনের জেরে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে ছিল বইপাড়া। আর তারপরে আমফানের ঝড় তছনছ করে দিলো বইপাড়াকে।
কিন্তু সেই ধ্বংস স্তুপের মধ্য থেকেই ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বইপাড়া। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন বই। বিষয়ের বৈচিত্র্যে বইগুলো একেকটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। মেজাজে, লেখার ধারায়, অভিনবত্বে স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। যেমন মঙ্গলবার প্রকাশিত হচ্ছে পল্লবী সেনগুপ্তের নতুন ধারার একটি বই। বইটির নাম ‘আতঙ্কের নেপথ্যে’। লেখিকা জানাচ্ছেন, ‘রিয়ালিটি হরর সেকশন’ সিরিজের প্রথম পর্বে কিছু অতি প্রাকৃত ঘটনা নিয়ে নন ফিকশন ও সেই ঘটনাগুলো অবলম্বনে ফিকশন অর্থাৎ গল্প লিখেছেন এই বইয়ে।
তিনি বলেন, ‘ ভারতবর্ষের ৫ টি জায়গায় এখনও কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা বাস্তবে ঘটে । যেমন ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট মার্ক্স রোডে ২০০২ এ সম্পত্তির বিবাদে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধাকে খুন করা হয়। তারপর ওই বাড়িতে অপ্রাকৃত ঘটনা ঘটতে থাকে। শেষমেষ বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু ওই বৃদ্ধার ব্যবহৃত একটি গাড়িকে এখনও ওখানে চালক বিহীন অবস্থায় চলতে দেখা যায়। দ্বিতীয় ঘটনা হল ৬০ এর দশকে ভারত শ্রীলঙ্কা বন্দর শহর ধনুষ্কোডি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে যায়। এখনও সেই জনশূন্য শহরে অপার্থিব ঘটনা ঘটে, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা নেই। তৃতীয় শহরটি হল হিমাচল প্রদেশের
ক্যান্টনমেন্ট শহর সোলান। ব্রিটিশ ভারতে বিদ্রোহী আইরিশ সেনাদের এখানে খুন করা হয়। এখন সেই শহর ভুতুড়ে শহরের তকমা পেয়েছে। চতুর্থ রাজস্থানের কোটা শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেল। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এখানেই সিপাহিরা ব্রিটিশ সেনাদের একটি দলকে খুন করে। এখনও সেই বিলাসবহুল হোটেল, রিসর্টে মাঝে মাঝে অপার্থিব ঘটনা ঘটে। আর পঞ্চম জায়গাটি হলো মুসৌরির একটি খনি। ৯০ এর দশকে এই খনি দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিক মারা যান। সেই থেকে এই খনিটি পরিত্যক্ত।’ কলেজ স্ট্রিটের একটি নামি প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন তা সত্ত্বেও ৭, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বরে হচ্ছে সার্বিক লকডাউন!
প্রায় একই ধরনের বিষয়ের আর একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে আগামী ১৫ তারিখ । বইটির নাম ‘ ছায়া আছে কায়া নেই’ , লেখক অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়। বইটির প্রকাশক ত্রিদিব ঢট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘ অন্য জগতের অতিথিদের অব্যক্ত কথা তুলে ধরেছেন লেখক। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র- এঁরা প্রত্যেকেই প্ল্যানচেট করতেন। সেই অভিজ্ঞতা কেমন, অন্য জগতের অতিথিরা কী বলতেন তাঁদের? নতুন বৌঠানের সঙ্গে প্ল্যানচেটে কী কথা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের? সেইসব রোমহর্ষক বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। এছাড়াও ৮ তারিখ প্রকাশিত হচ্ছে হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্তের ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘ সোমনাথ সুন্দরী’ । ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানালেন এই দুটি বই ছাড়াও তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের প্রথম ও দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ নন্দিত নরক’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এর প্রথম অনুমোদিত ভারতীয় সংস্করণ। প্রকাশিত হয়েছে সমরেশ মজুমদারের ‘কলিকাতায় নবকুমার’ সম্পূর্ণ খণ্ড, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের নিজের লেখা দুটি উপন্যাস ‘প্রথম প্রেম’ ও ‘ মৃত্যুকে আমি দেখেছি’।
কলেজ স্ট্রিটের আর এক নামি প্রকাশক সুধাংশু দে জানালেন, খুব শিগগিরই প্রকাশিত হতে চলেছে ইন্দ্রনীল স্যান্যালের চার অক্ষর। এছাড়াও ২৬ তারিখ প্রকাশ করতে চলেছেন বিদ্যাসাগর রচনা সমগ্রের প্রথম খণ্ড। সব মিলিয়ে ছন্দে ফিরছে বইপাড়া। বইয়ের নতুন গন্ধের খোঁজে সেই চেনা ভিড়, চেনা অনুষঙ্গ।