fbpx
কলকাতাগুরুত্বপূর্ণদেশপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

অবসরের অন্যতম সঙ্গী বই

দেশের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর বিভিন্ন কাজে যখন কলকাতায় এসেছেন তখন অনেকবারই সাক্ষাৎ হয়েছে যুগশঙ্খের প্রতিনিধি অরিজিৎ মৈত্রের সঙ্গে। কথায় কথায় উঠে এসেছে তাঁর বই পড়ার গল্প। গত বছর তাঁর ভারতরত্ন সম্মান পাওয়ার পর তাঁর সেই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল যুগশঙ্খের পাতায়। আজ তাঁর বিদায় বেলায় আমাদের আর্কাইভ থেকে পুনরায় প্রকাশিত করা হল তাঁর সেই বক্তব্য।

প্রণব মুখার্জি: বই পড়ার সখ শৈশব থেকেই। পরবর্তী সময়ে যখন রাজনৈতিক ও সরকারি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন সময় কমে গেলেও নানান ধরনের বই হাতে এলেই পড়তাম এবং সেই অভ্যাসটা এখনও আছে। অনেক বই কিনেছি আবার আজও বহু মানুষ বিভিন্ন ধরনের বই দিয়ে যান। অবসরে সে সব পড়তে মন্দ লাগে না, যেন বর্তমানে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী পড়ছি। পাঁচ বছরে রাষ্ট্রপতি ভবনের গ্রন্থাগারে বিপুল পরিমাণ এবং বৈচিত্রময় বই দেখেছি। আমাদের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের ব্যক্তিগত সংগ্রহতেও বহু ধরনের দুঃষ্প্রাপ্য বই ছিল। ওঁর মৃত্যুর পরে পুত্র গোপাল সেগুলো রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে নিয়ে যান। নিলাম সঞ্জীব রেড্ডি এবং ভেঙ্কটরমনেরও খুব বইয়ের সখ ছিল। বাকিদের কথা বলতে পারব না। তবে আবদুল কালামের একটা বিশেষ বিষয় সম্পর্কে বই পড়ার আগ্রহ ছিল, সেটা অবশ্যই বিজ্ঞান। সেই বিষয় নিয়ে সময় করে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কালামের কথোপকথন হত। তাদের যেন নিজের কাছে ডেকে আনতেন, তেমনই বিভিন্ন স্কুল-কলেজেও যেতেন। সব সময় নিজেকে এই ভালো কাজটির সঙ্গে যুক্ত রাখতেন। এটা এমনিতে রাষ্ট্রপতিদের মেয়াদ শেষ হলে যত প্রেসিডেন্সিয়াল পেপার্স থাকে, সেই সবগুলো ওখানকার লাইব্রেরিতে চলে যায়। এটাই রীতি। সেগুলো দেখারও একটা সুযোগ হয়েছিল।

বই পড়ার পাশাপাশি ডাইরি লেখারও অভ্যাস ছিল আমার। স্নাতক হওয়ার পর থেকেই আমার ডায়রি লেখার শুরু। অনেক দিন পর্যন্ত সে সব ডায়রি যত্ন সহকারেই রাখা ছিল। মনে আছে ১৯৮৮ পর্যন্ত নিয়মিত ডায়রি লিখতাম। ওই বছরেই দিল্লিতে খুব বৃষ্টি হয়, ভীষণ জল জমে আর তখনই ডায়রিগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ১৬ ঘন্টা জল জমে ছিল। সমস্ত ডায়রি, কাগজপত্র, বই নষ্ট হয়ে যায়। সময়ই পাইনি সেগুলো বের করার। সচারাচর ওই রকম সময় দিল্লিতে খুব বৃষ্টি হয় না। খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর ’৮৮, ’৯০, ’৯১, ওই তিন বছর আর কোনও ডায়রি লিখিনি। এর বেশ কিছুদিন পরে পি. ভি. নারসিমহা রাও আমাকে একদিন লেখার বিষয় জিজ্ঞেসা করলে, ওঁনাকে ডায়রি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলি। উনি সব শুনে বলেছিলেন, ‘তোমার স্মৃতিশক্তি তো খুব প্রখর, তুমি যখনই সময় পাবে তখন মনে বিষয়গুলিকে মনে করার চেষ্টা করো। আর সঙ্গে সঙ্গে লিখে যাও। যা মনে আসবে, সবই লিখে রাখবে।’

সেটা করতে গিযে আমি দেখলাম, পূর্ববর্তী ১২ বছরে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক ঘটনা এবং কার্যকলাপ আমি রি-কানেক্ট করতে পারলাম।৬৯ থেকে যা যা দেখেছি রাজ্যে এবং কেন্দ্রে, মোটামুটি অনেক কিছুকেই গুছিয়ে লিখলাম। লেখা হয়ে গেলে টাইপ করে দেখলাম প্রায় ৪০০ শো পাতায় দাঁড়াল। সেটা হয়ে গেল আমার লেখা বইয়ের সিরিজের প্রথম খণ্ড ‘দ্য ড্রামাটিক ডিকেড.দ্য ইন্দিরা গান্ধি ইয়ারস’-এর বেসিক লেখা। তারপর তো সেই সব বিষয়ের অন্যান্য বই কনসাল্ট করলাম। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করলাম আর কয়েকটি বইও পড়লাম। সেরকমভাবেই তিনটে বই লিখেছি। রাষ্ট্রপতি ভবনে বসেই বইয়ের অনেক কাজ করেছি।

অনেকে আমাকে জিজ্ঞেসা করেন এত কথা মনে রাখি কী করে। তখন মনে হয় স্মৃতিশক্তি  আগের মত আছে কিনা জানি না, তবে এখনও তো মেমারি ফেল করেছে বলে মনে হয় না। দীর্ঘ বহু বছর ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাজ করেছি, ওঁনার বই পড়ার আগ্রহও ছিল চোখে পড়ার মতো। ওঁর আগ্রহ ছিল স্যোশাল সিস্টেম, স্যোশাল কাস্টমস, স্যোশাল ডেভলপমেন্ট সম্পর্কে। আমাকে দু-তিনবার বলেছিলেন বাইরে থেকে বই এনে দেওয়ার জন্য। আমি এনেও দিয়েছিলাম। এই সব বিষয়ের পাশাপাশি সাহিত্যের প্রতিও ওঁর আকর্ষণ দেখতাম। এখনও নিয়মিত বই পড়ি বাংলা সাহিত্যের বিষয় আমার বরাবরই ভালোবাসা ছিল এবং আজও আছে। শুধু বই নয়, বিভিন্ন ধরনের পত্র-পত্রিকা পড়তেও আমার ভালো লাগে।

Related Articles

Back to top button
Close