আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা ও শ্রমিক ঘাটতি… উভয় সংকটে শস্যগোলার বোরো চাষিরা
প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছেন শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের বোরো চাষিরা সপ্তাহকাল যাবৎ এক দুদিন অন্তরই হয়ে চলেছে ঝড় বৃষ্টি। তার ফলে জমিতে জমেছে জল। জলে ভাসছে জমিতে কেটে ফেলে রাখা পাকা বোরো ধান। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এমন অবস্থা তৈরি হওয়ায় শস্যগোলার চাষিদের মাথায় হাত পড়ে গেছে। লকডাউন চলায় বেড়েছে চাষিদের ভোগান্তি। বোরো ধান কাটার মরশুমে দেখা দিয়েছে খেতমজুর সংকট।
বর্ধমানের ১ ব্লকের সরাইটিকর এলাকার চাষি শেখ হারাধন বুধবার বলেন, ‘এতকাল ধান কাটার মরশুম শুরু হতেই ভিন জেলা বা ভিন রাজ্য থেকে এই জেলায় চলে আসতেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। কিন্তু এখন লকডাউন চলায় সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের আগমন পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে। ধান কাটার জন্য হারভেস্টার মেশিনও মিলছে না।
হারাধনবাবু জানালেন, সাধারণতহারভেস্টার মেশিনের চালকরা পাঞ্জাব থেকে আসেন। লকডাউনে চলায় তাঁরাও আসতে পারছেন না। ফলে বোরো ধান জমি থেকে ঘরে তোলা নিয়ে মহাসংকট তৈরি হয়েছে’।
অন্যদিকে ভাতারের বনপাস পঞ্চায়েত এলাকার চাষি কৃষ্ণকান্ত ঘোষ বলেন, ‘একদিকে প্রকৃতির মার আর অন্যদিকে পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক কিংবা হারভেস্টার না পাওয়া।এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে গিয়ে জেলার বোরো চাষিদের এখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। মাঠে ধান পেকে গেছে। এই অবস্থায় ধানকেটে ঝেড়ে ঘরে তোলার জন্য না মিলছে খেতমজুর না মিলছে হারভেস্টার মেশিন। এমন অবস্থার মধ্যে আবার ঝড়-বৃষ্টি লেগেই চলেছে।বোরো ধান কাটার ভরা মরশুমে বাধ সেধেছে প্রকৃতি।’
জেলার কৃষ্ণপুর, বাঘাড়, হলদি, দেপাড়া, শক্তিগড়, বড়শুল, রায়না, জামালপুর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা বলেন, বুধবার ভোররাত থেকেও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে বোরো ধানের জমিতে জল জমে গিয়েছে। অনেক জমিতে আবার কাটাধান জলে ভাসছে।
চাষিরা জানান, এইভাবে বৃষ্টি হয়ে চললে কাটা ধান আর ঘরে তোলা যাবে না। জল পেয়ে ধানের রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধানে অঙ্কুরোদগম হয়ে গেলে ধান আর বিক্রি করাও যাবে না। ফলে চূড়ান্ত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বোরো চাষিদের।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এবিষয়ে বলেন, লকডাউন চলায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে ঠিকই। তবে বোরো ধান চাষিদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয় সেই বিষয়টি সরকার দেখছে।