অভাব নিত্যসঙ্গী, বাবার রাতভর জেগে তৈরি করা মাস্ক বিক্রি করছে ছেলে

জেলা প্রতিনিধি , দিনহাটা: লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় ঘরে অভাব নিত্যসঙ্গী। কর্মহীন হয়ে রতন রায় ফিরে এসেছেন দিনহাটায়। শিলিগুড়িতে দর্জির দোকানে কাজ লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা আজও মেলেনি। গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে গেলে দেখছি দেখব বলে কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় কোনও কাজ না মেলায় নিজেই বাড়িতে মাস্ক তৈরি করেন। ঘুরে ঘুরে তা বিক্রি করেন রতন রায়ের ছেলে নবম শ্রেণীর এক ছাত্র রনি। করোনা আবহে গতকয়েক মাস থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল। পাশাপাশি বাবার কাজও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানো।
কঠিন এই সময়কালে মাস্ক নিয়ে এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন রনি। রাতভর জেগে বাবা রতন রায় মাক্স তৈরি করেন। সকাল হলে তা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সে। তার বাবার হাতের তৈরি মাস্ক ছাড়াও বিভিন্ন রকম মাস্ক সাইকেলে ঝুলিয়ে দিনভর বিক্রির পর সামান্য আয় হয়। সেই টাকা তুলে দেন বাবার হাতে। এভাবেই করোনা কালে গত কয়েক মাস ধরে কোনও রকমে চলছে তাদের সংসার। বছর চারেক আগে মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রের মা শংকরী রায়ের। রতন রায়ের এক ছেলে রাজ রায় এবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। আর রনি শোনিদেবী জৈন হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। সামান্য বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। দুই ছেলে স্কুলে পড়লেও সেখানে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাজ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতেই স্নাতক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনরকম টাকা লাগবে না এই ঘোষণায় স্বস্তি পান রতন।
আরও পড়ুন:শিবু সোরেনের পরে করোনায় আক্রান্ত ঝাড়খন্ডের কৃষিমন্ত্রী বাদল পাত্রলেখ
শিলিগুড়িতে দর্জির কাজ করলেও লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে এসেছে রতন। দিনহাটা এক ব্লকের বড় আটিয়াবাড়ি দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের হেমন্টন বাজার এলাকায় তাদের বাড়ি। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিমাসে চাল গম পাওয়ায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। রতন বলেন, জব কার্ড থাকলেও আজও মেলেনি কোনও কাজ। এছাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা তারা পাননি। এই সময় মাস্কের চাহিদা থাকায় বাড়িতেই রাতভর জেগে তা তৈরি করেন। এরপর সকাল হলেই রনি সাইকেলে সেই মাস্ক নিয়ে বের হয়।
আরও পড়ুন: করোনা! ব্রিটিশ সরকারের ঋণ ছাড়াল ২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড
দিনহাটার রংপুর রোড এলাকায় রনি জানায় লকডাউনে বাবার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার বাবা বাইরে থাকায় তারা দুই ভাই বাড়িতে থাকতেন। শিলিগুড়ি থেকে বাবা তাদের খরচের টাকা পাঠাতেন। তারা দুই ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি রান্না করেও খেতেন। বাবা কাজ হারিয়ে বাড়িতে ফিরে আসায় তারাও সমস্যায় পড়েছেন। এমতবস্থায় সংসার চালাতে রাতভর জেগে বাবা মাস্ক তৈরি করেন। তার দাদা রাজ দুই-একটি টিউশনি করলেও সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাস্ক বিক্রি করেন। সেই আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার।
বড় আটিয়াবাড়ি দুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মকবুল হোসেন বলেন লকডাউনের এই সময় এলাকার দুঃস্থ অসহায় মানুষের কারও যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য তারা প্রতি পরিবারকে পাঁচকেজি করে চাল দিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে কোন সহযোগিতা করা যায় কিনা তা অবশ্যই দেখবেন।
বিষয়টি নিয়ে দিনহাটা এক ব্লকের বিডিও সৌভিক চন্দ বলেন, ওই পরিবার কেন এখনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়নি তা তার জানা নেই। যাতে সরকারি সাহায্য পায় তা তিনি দেখবেন।