fbpx
কলকাতাহেডলাইন

ঐতিহ্যের দে বাড়ির দুর্গাপুজোয় ব্রিটিশ মহিষাসুর

শরণানন্দ দাস, কলকাতা: এবার মা দুর্গা একমাস দেরিতে মর্ত্যে আসছেন। যেহেতু আশ্বিন মাস এ বছর ‘ মল মাস’ তাই মা আসছেন কার্তিক মাসে। করোনা কাঁটায় ত্রস্ত বাঙালি এই দুঃসময়েও দেবীর আরাধনায় ব্রতী। শহরের সার্বজনীন পুজোর পাশাপাশি বহু বনেদি বাড়ির পুজো হয়। আর সেইসব বনেদি বাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে চমকপ্রদ কাহিনী। আবার প্রতিমাতেও রয়েছে বৈচিত্র্য।  যেমন ভবানীপুরের দে বাড়ির দুর্গাপুজোয় মহিষাসুর একেবারে অন‌রকম।  ১৫০ বছরেরও পুরনো এই পুজোয় মায়ের পায়ের তলায় ব্রিটিশ মহিষাসুর। তাঁর পরনে কোট, প্যান্ট,পায়ে বুটজুতো।

মহিষাসুরের এমন বেশ কেন? পরিবারের উত্তরসুরী দেবরাজ দের কাছে জানা গেল সেই ইতিহাস। ১৮৭০ সালে পুজোর সূচনা করেছিলেন রামলাল দে। তিনি তুলো ও শয্যাদ্রব্যের ব্যবসায়ী ছিলেন। বংশ পরম্পরায় উত্তরসূরীরা সেই ব্যবসাতেই জড়িত রয়েছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের আবহে জড়িয়ে পড়ে এই বনেদি পরিবার। ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মহিষাসুরকে ব্রিটিশ সাহেবের রূপ দেওয়া হয়। কালোকোট ও বুট পরিহিত সাহেবরূপী মহিষাসুর মা দুর্গার পায়ের তলায় বিরাজমান। দেবী ত্রিশূল দিয়ে সাহেবরূপী অসুর বিনাশ করছেন। এখনও সেই রূপ অপরিবর্তিত।

এই পুজোর শুরুরও একটা গল্প আছে। একদিন সন্ধ্যায় লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দুই পুত্র ও দুই কন্যাসহ ভিতর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। পরিবারের এক সদস্য পিছু নিয়ে কিছু দূর গিয়ে আর তাঁদের দেখতে পাননি। এর কিছুদিন পরে দেখা যায় ওই নারীমূর্তি বাড়ির ছাদের কার্নিশে বসে পা দোলাচ্ছেন। এরপরই রামলাল দে ওই নারী মূর্তির স্বপ্নাদেশ পান দেবী দুর্গার পুজো করার জন্য। সেই শুরু ,এখন  রামলাল দের তিন পুত্রের মধ্যে দুই পুত্র অতুলকৃষ্ণ দে ও অনুকূলকৃষ্ণ দের বংশধরেরা পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ১২০ কেজি সোনা দিয়ে হায়দরাবাদে তৈরি হচ্ছে স্বামী রামানুজাচার্যের মন্দির

ঐতিহ্যের এই দুর্গাপুজোয় ১৫০ বছরের পুরনো সাবেকি কাঠামোই এখনও ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ বিসর্জনের পর ওই পুরনো একচালার কাঠামো ফিরিয়ে আনা হয়। সেই কাঠামোতেই পরের বছর নতুন করে প্রতিমা তৈরি হয়। করোনার আবহে বহু বাড়ির পুজোয় এবার নিমন্ত্রিত ছাড়া সাধারণ দর্শকদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কাজেই বনেদি বাড়ির পুজো দেখার সুযোগ  এবার দর্শনার্থীরা পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সুতরাং কোট, বুট পরা মহিষাসুর দর্শন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে।

 

 

 

Related Articles

Back to top button
Close