মালদায় সন্ধ্যা হলেই চলত গরু পাচার!

মিল্টন পাল, মালদা: বিকেল হলেই মালদা জেলার সীমান্তবর্তী আমবাগান গুলিতে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শয়ে শয়ে গরু। এখানে সেই সময় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। এই গরু গুলিকে পাহারা দেয় অস্ত্র হাতে কিছু মানুষ। এরা অন্য কেউ নয় এরা হল গরু পাচারকারী। এরপর ওই গরুগুলিকে গোপন ডেরায় নিয়ে গিয়ে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে ঝাপ মারা হয়। সেই সাপ মারতে ব্যস্ত থাকে একদল যুবক। কোথাও লেখা ঈদুল কোথাও বা হবি। এগুলো হল পাচারকারীদের সাংকেতিক নম্বর। রাত হলেই আরও একদল যুবক এই গুলি নিয়ে নদী পথে রওনা হয় বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। এই যুবকদের বলা হয় পাছার। বিএসএফের ভাষায় হ্যান্ডেলার।
২০১৮ সালের আগে। এই চিত্রই দেখা যেত জেলার কালিয়াচক বৈষ্ণবনগর হবিবপুর পুরাতন মালদা এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে। গরু পৌঁছে দেওয়া হত তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে। নদী পার করলেই বাংলাদেশি হ্যান্ডেলাররা সেই গরু নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিত। সাংকেতিক চিহ্ন দেখেই নির্দিষ্ট বিট খাটালে গরু বাংলাদেশে পৌঁছে যেত। আর এই ভাবেই মুর্শিদাবাদ থেকে মালদা এনামুল হকের খুইদা সিন্ডিকেট তাদের প্রচার চালাত।
২০১৮ সালের এনামুল হক গ্রেফতার হলে কিছুটা নড়েচড়ে বসে সিন্ডিকেট। জামিন পাওয়ার পর আগের মত সক্রিয় না হলেও সিন্ডিকেট তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।কারা রয়েছে এই সিন্ডিকেটে। রয়েছে কালিয়াচকের এক গরু পাচারের মাফিয়া ডন তার আত্মীয়-স্বজন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ একজন জনপ্রতিনিধি ও রয়েছে। রয়েছে হবিবপুর এলাকার এক চাল ব্যবসায়ী। গরু পাচারকারীদের সবসময় পছন্দ জলপথ। কারণ স্থলপথে বিএসএফকে ফাঁকি দেওয়া যতটা সহজ, জলপথে তা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। দ্বিতীয়তঃ খুব একটা বেশি এলাকা যেতে হয় না।
নদী পার করলি বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বিএসএফের আর নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। গত এক বছরে দেখা গিয়েছে কলাপাতার ভেলায় অভিনব কায়দায় গরুকে বেঁধে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি হ্যান্ডেলাররা সেই গরু সীমান্তের কাছাকাছি গেলে তুলে নেয়। এভাবেই চলছে গরু পাচার। মুর্শিদাবাদ মালদার সীমান্তবর্তী প্রত্যেকটি গ্রামে একই চিত্র। কোথাও কোথাও বিএসএফ জওয়ানরা পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হয়। ২০১৮সালের আগে যে ভাবে বিএসএফের যোগসাজশে লাইন দেওয়া হত বর্তমানে তার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। কি এই লাইন? সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু গুলোকে জমা করা হত। উপর থেকে নির্দেশ আসলে সীমান্তের বেশ কিছু পয়েন্ট প্রহরীহীন করে দিত বিএসএফ। আর সেই সুযোগ নিয়ে রমরমিয়ে চলতো গরু পাচার।
আরও পড়ুন:ওয়েইসি বঙ্গে এলে লাভ বিজেপির… মুসলিম ভোট ব্যাংকে থাবা বসাবে মিম: সিদ্দিকুল্লা
২০১৮ সাল নাগাদ তৎকালীন মুর্শিদাবাদে বিএসএফের বহরমপুর সেক্টরে ৮৩ ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত কমান্ডেন্ট জিবি ইউ ডি ম্যাথুকে ৪৫ লক্ষ টাকা সহ গ্রেফতার করে সিবিআই। আর সে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কাকে এই টাকা দিয়েছে মুর্শিদাবাদের কুখ্যাত হাওলা ট্রেডার্স গরু পাচার সিন্ডিকেটের মাথা এনামুল হক। এরপরই গ্রেফতার হয় এনামুল। মেথুর জবানবন্দিতে তিনি সিবিআইকে জানান, তাকে এনামুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক তার বাহিনীর পাশের ব্যাটেলিয়ান মালদা সেক্টরের অধীন ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট সতীশ কুমার।সেই সূত্রেই সতীশ কুমার কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।