আসানসোলের অবৈধ কয়লাখনি ও পাচারের তথ্য জানতে ইসিএলকে চিঠি সিবিআইর

শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল: অবৈধ কয়লা খনি ও বেআইনি কয়লা পাচারের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে এবার ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠাল। সেই চিঠি পাওয়ার পরে ইসিএলের সদর দফতর শাঁকতোড়িয়ায় শোরগোল পড়েছে। আর চিঠি আসার সেই খবর ইসিএলের বিভিন্ন এরিয়ার অফিস ও ইসিএলের নিজস্ব নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকদের কাছে পৌঁছাতেই তাদের মধ্যেও চাঞ্চল্য ও আতংক দেখা দিয়েছে।
ইসিএলের লিজহোল্ড এলাকায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কয়লা চুরি হচ্ছে। কিন্তু এই প্রথম সিবিআই সরাসরি ইসিএলের সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিকের কাছে উত্তর চেয়ে প্রশ্ন পাঠালো। ইসিএলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক স্বীকার করেন, সোমবারই সিবিআইয়ের কাছ থেকে সদর দফতরে এইরকম একটি চিঠি এসেছে। সেই চিঠি পাওয়ার পরে ইসিএলের সমস্ত এরিয়া ম্যানেজার ও এরিয়া সিকিউরিটি ইনচার্জদের কাছে সেইসব প্রশ্নের উত্তর চেয়ে পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সেই উত্তর পাওয়ার পর চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে হয়ত এই উত্তর পাঠিয়ে দেওয়া হবে সিবিআইয়ের কাছে।
আরও জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের পাঠানো চিঠিতে ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে অবৈধ কয়লা খনি ও কয়লা চুরি বন্ধ করতে কি কি ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। তার যাবতীয় সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, ইসিএলের লিজ হোল্ড এরিয়ায় কিভাবে অবৈধ কয়লা খনি চলছিলো? তাও আবার কর্তৃপক্ষের নজরে এড়িয়ে? তারও বিস্তারিত তথ্য সহ ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। ইসিএলের লিজ হোল্ড এরিয়াতে কিভাবে ওয়ে ব্রিজ তৈরি হয় ও সেখান থেকে কয়লা বোঝাই ট্রাক ওজন করে বাইরে পাঠানো হতো? এর আগে এমন কোনও সিবিআইয়ের তল্লাশিতে কোনও এরিয়ার আধিকারিক বা সদর দফতরের আধিকারিকরা যুক্ত ছিলেন কি না। যদি থাকেন তাহলে সেটা কোন সময় ও কোথায় হয়েছিল। শেষে কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সেল কাজের যে অর্ডার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর সিবিআই ইসিএলের একাধিক জিএম পর্যায়ের আধিকারিকের অফিস, আবাসন সহ বিভিন্ন জায়গায় হানা দেয়। অভিযান চালানো হয় একাধিক ব্যবসায়ীর বাড়িতে। সেইসব হানায় সব মিলিয়ে নগদ ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়াও অনেক নথি, হার্ডডিস্ক ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছিল সিবিআই। এরপরে গত ২ ডিসেম্বর ইসিএলের বাঁশরা সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে সিবিআই। একইসঙ্গে সিবিআই ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ ও নিরসায় খোঁজখবর শুরু করেছে।
একদিকে কয়লা পাচারকারী হিসাবে পরিচিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত সিবিআই যেমন করছে, ঠিক তেমনি ইসিএলের যেসব এলাকায় অবৈধ খনি চলে সেখানকার আধিকারিক, সিআইএসএফ ও সংস্থার সিকিউরিটিদের ভূমিকা নিয়ে জানার জন্য যাবতীয় নথি সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। কয়লা ব্যবসায়ীদের মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস থেকেও বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে কারা কারা এইসব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে কোন কোন আধিকারিক বা নিরাপত্তাকর্মী সরাসরি তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ও তাদের এই ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। এই চিঠির উত্তর হাতে পাওয়ার পর সিবিআই আসানসোলে অস্থায়ীভাবে অফিস করে আরও বড় ধরনের তদন্তে নামবে বলে জানা যায়।