বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়সর রদ বদল তৃণমূলে, রাজ্য কমিটিতে এলেন ছত্রধর মাহাতো
প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের বড় দায়িত্ব

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়সর রদ বদল তৃণমূলে। পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। নির্বাচনের আগে দলের খোল নলচে বদলে বদলে ফেলতে চান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই উদ্দেশ্যে ছিল এদিনের বৈঠক। বদল হল বেশ কিছু জেলার জেলা সভাপতি। তৈরি হল ২১ জনের রাজ্য কমিটি। তুলে দেওয়া হল অবজারভার পদ। একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়েই দলে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। দিদি বলেন, ‘আমি চিরদিনই থাকব না। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীদের আমি তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই। কার্যত ঢেলে সাজানো হচ্ছে সংগঠনকে। মাওবাদী সন্দেহে দীর্ঘকাল জেলবন্দি থাকার পর গত বছর মুক্ত হওয়া ছত্রধর মাহাতোকে সরাসরি নিয়ে আসা হল তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে। এই সংযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। পাকাপোক্ত পরিকল্পনা করেই তাঁকে রাজনীতি মূল স্রোতে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া রাজ্য কমিটির নতুন সদস্য হলেন অমিত মিত্র, সৌগত রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার হাঁসদা। ২১ জনের রাজ্য কমিটির অধিকাংশেই ঠাঁই পেলেন নতুনরা।
উনিশের লোকসভায় জঙ্গলমহল, এবং উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের কাছে তৃণমূলের শোচনীয় হার থেকে বেশ শিক্ষা নিয়েছে তৃণমূল। অথচ জঙ্গলমহল তৃণমূলের রীতিমতো শক্ত ঘাঁটি ছিল। মাওবাদী সমস্যা দমন করে সেখানে শান্তি ফেরানোর প্রতিদান স্বরূপই সেখানকার জনসমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তবে বছর কয়েক আগে থেকে গেরুয়া শিবিরের আচমকা এসব জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে বসে উনিশের ভোটে জঙ্গলমহলের মূল তিন জেলা – ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের সাফ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। সেই জঙ্গলমহলে হৃত সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে ফের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মমতা। তাই সেই জায়গার দায়িত্ব দিয়ে তিনি সরাসরি রাজ্য কমিটিতে নিয়ে এলেন ছত্রধর মাহাতোকে।
একুশে বিধানসভা ভোটের আগে যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে গোটা জেলা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। তাঁরা কারা? লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দুলাল মুর্মু, মহুয়া মৈত্র, পার্থপ্রতিম রায়, শ্যামল সাঁতরা, গুরুপদ টুডু.. প্রমুখ। হাওড়়ার জেলা (শহর) সভাপতি পদ থেকে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। লোকসভা ভোটের পর মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। এবার তাঁকেই গোটা নদিয়া জেলার সভাপতি করা হল। সেই পদে আগে ছিলেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। গোষ্ঠী কোন্দলে বিদীর্ণ কোচবিহার জেলাসভাপতি পদে আনা হল প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। অনন্ত বর্মনকে সরিয়ে তাঁর জায়গা আনা হল অপেক্ষাকৃত তরুণ পার্থকে।
আরও পড়ুন: ‘পুলিশ কার্যত শাসকদলের কর্মীদের মতো আচরণ করছে’, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চাইলেন রাজ্যপাল
জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়াতেও সভাপতি বদল করেছেন দিদি। শুভাশিস বটব্যালের জায়গায় বাঁকুড়ার সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে। পুরুলিয়ায় শান্তিরাম মাহাতোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গুরুপদ টুডু। মধ্যবয়সী গুরুপদ রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী। ঝাড়গ্রামের সভাপতি পদ থেকে বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুলাল মুর্মুকে। বীরবাহাকে ঝাড়গ্রামের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কেবল একটি জেলাতেই সভাপতি বদল করেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি পদ থেকে অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গৌতম দাসকে।