ভারত-বাংলাদেশের আপত্তি, ব্রহ্মপুত্রের উপর বিশাল বাঁধ গড়ছে চিন
জল-সংকটের ছায়া উত্তর-পূর্ব ভারতে

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: সীমান্ত নিয়ে চিনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে। তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজিং। এটি মূলত জলবিদ্যুত্ প্রকল্প। তবে নিজেদের অংশে বাঁধ নির্মাণ করলেও ভারতের উদ্বেগ থাকছে , কারণ এই নদের উত্স তিব্বতে হলেও, অরুণাচল প্রদেশ, অসমের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এটি।
তিব্বতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর উপরে বিশাল বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছে চিন। রবিবার এই খবর প্রকাশ করেছে চিনের সংবাদমাধ্যম। এই বাঁধ নির্মাণ হলে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবল জলাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১-২৫ সাল পর্যন্ত ১৪ তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে এই বাঁধটি তৈরি করা হবে। রবিবার এই খবর প্রকাশিত হয়েছে চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে। তবে এই বাঁধ নির্মাণ হলে ভারতে প্রবল জলাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকী ক্ষতি হবে আরেক পড়শি দেশ বাংলাদেশেরও । কিন্তু দু’দেশের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ঘোষণা চিনের।
চিন অধিকৃত তিব্বত অঞ্চলের উত্সস্থল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদী। অরুণাচলে পৌঁছে এর নাম হয়েছে সিয়াং। আর অসমে প্রবেশ করার পরে এই সিয়াংই পরিচিত হয় ব্রহ্মপুত্র নামে এবং এর পর ফের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তা। জানা গিয়েছে, এই অরুণাচল সীমান্তের কাছাকাছি তিব্বতের মেডগ কাউন্টিতে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর উপর বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছে বেজিং।
ব্রহ্মপুত্র নদটি তিব্বত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। তাই তিব্বতে এই ব্রহ্মপুত্রের ওপর বাঁধ নির্মাণ করলে নদীর জল তার নিজস্ব গতিতে ভারতে ঢুকবে না। নদীর জল আটকেও দেওয়া হতে পারে। এর ফলে ভারতের যে রাজ্যগুলির ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হয়েছে সেই রাজ্যগুলিতে জলের কষ্ট দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্রের ওপর নির্মিত অরুণাচল প্রদেশের জলবিদ্যুত্ প্রকল্পে বিদ্যুত্ উত্পাদনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কার্বন উত্পাদনের পরিমাণ কমাতেই এই প্রজেক্টের সূচনা বলে চিনা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: এখনই জাঁকিয়ে শীত নয় বঙ্গে
এর আগেও ব্রহ্মপুত্রের উপরে একাধিক ছোট বাঁধ নির্মাণ করেছে বেজিং। নতুন প্রকল্পে উৎপাদিত জলবিদ্যুতের পরিমাণ বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রকল্প, মধ্য চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম-এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ হতে পারে বলে জানিয়েছে চিনা সংবাদমাধ্যম। চিনের জলবিদ্যুত্ শিল্পে এ এক ঐতিহাসিক সময়। এটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুত্ উত্পাদন হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ, জাতীয় নিরাপত্তা, জীবনযাপনের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ গত ১৬ অক্টোবর প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। ইয়্যান আরও জানান, এই প্রকল্প বছরে ৬০০ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হবে। যার মধ্যে ৩০০ কোটি কিলোওয়াট কার্বনমুক্ত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুত্ও উত্পাদিত হবে।
প্রসঙ্গত, নদীর অবস্থানের সুবাদে ভারতের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে চিন। বিশেষ করে তিব্বত অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখার পরে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলির উত্স রয়েছে বেজিংয়ের কবজায়। এর মধ্যে ৪৮% নদীর জলই ভারতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে। নয়া এই জলবিদ্যুত্ প্রকল্পের কারণে স্বভাবতই জল কমে যাবে ব্রহ্মপুত্রের। আবার বর্ষার সময় বাঁধের জল ছাড়লে অসমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বাংলাদেশের একাধিক জায়গা জলের তলায় চলে যেতে পারে।