
শরণানন্দ দাস, কলকাতা: কয়েকদিন ধরেই আকাশজুড়ে মেঘ রোদ্দুরের খেলা চলছে। এখনও আকাশের রং ফিরোজা হয়নি। কাশফুলও এখনও দোলা দেয়নি। কিন্তু বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসবের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুজোর আর ঠিকঠাক হিসেব করলে দু মাসও সময় নেই। কিন্তু এবার সেই হৈচৈ, হুল্লোড় ব্যাপারটাই নেই। তার কারণটা সব্বার জানা। করোনার দাপটে সব ম্রিয়মাণ। কিছুটা দেরি করেই আসরে নেমেছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। তবে জৌলুস কম, কম বাজেটে পুজো হচ্ছে। তাই এবার প্রতিমার উচ্চতাও কম, আর এবার বেশিরভাগ মণ্ডপে এক চালচিত্রের ঠাকুর দেখা যাবে।
সোমবার কুমোরটুলিতে দেখা গেল মৃৎশিল্পীরা বৃষ্টির মধ্যেই ত্রিপল ঢেকে চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে রূপান্তরের কাজ শুরু করেছেন। কেউ খড়ের কাঠামোয় মাটি লেপার কাজ করছেন, কেউবা মাতৃমূর্তির মুখের ছাঁচ তৈরি করছেন।
কথা হচ্ছিল কুমোরটুলির নামি মৃৎশিল্পী চায়না পালের সঙ্গে। ২০১৭ সালে চিনে একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন চায়না। দেবীমূর্তির মুখের ছাঁচ তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী। তার ফাঁকেই বলেন,’ এবার করোনার জেরে প্রতিমা ছোট হয়ে যাচ্ছে। আসলে পুজোর উদ্যোক্তারা বলছেন, খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এবার বেশিরভাগ সার্বজনীন পুজোর প্রতিমাই হবে এক চালায় সাবেক মূর্তি। ডাকের সাজে সাজানো হবে মাকে। টানা চোখ হবে প্রতিমার। সাড়ে ৪ ফুট থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত প্রতিমার উচ্চতা হবে।’
আরও পড়ুন: ‘রবীন্দ্রনাথ আবেগের নাম’, উপাচার্যের ‘বহিরাগত’ মন্তব্যে ব্যথিত অনুপম হাজরা
কুমোরটুলির আর এক খ্যাতনামা শিল্পী মিন্টু পালেরও মন ভালো নেই। সবচেয়ে বড়ো দুর্গা তৈরি করে যিনি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন সেই তাঁকে তৈরি করতে হচ্ছে ছোট প্রতিমা স্টুডিওর একপ্রান্তে তৈরি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড়ো শায়িত বুদ্ধ মূর্তি। শিল্পী বলছিলেন, ‘ এবারও লেবু বাগান, সিমলা স্পোর্টিং, অগ্রদূত, রামদুলাল আমহার্স্ট স্ট্রিটসহ ২০ টা প্রতিমা গড়ছি। বাজেট অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। প্রতিমার জৌলুসটা কমে যাবে।’ করোনার এই পরিস্থিতিতে অনেক সমস্যার মধ্যেই উদ্যোক্তারা বাঙালির সেরা উৎসবের আয়োজন করছেন। প্রাণের আবেগ একই রয়েছে, আয়োজনের আন্তরিকতাতেও কোন ফাঁক নেই। সেটা মেনে নিচ্ছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরাও। শেষ পর্যন্ত পুজো হচ্ছে এটাই স্বস্তি তাঁদের কাছে। আপামর বাঙালির প্রার্থনা দনুজদলনী দেবী করোনাসুরকে বধ করে পৃথিবীর মানুষকে স্বস্তি দিন।