জার্মানিতে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার তুর্কী বংশোদ্ভূত মুসলিম দম্পতির

বার্লিন : তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান দম্পতির হাত ধরে করোনা মোকাবিলায় আশার আলো দেখছেন বিশ্ববাসী। কেননা, জার্মানির বায়োএনটেক ও আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে যে ৯০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তুরস্ক বংশোদ্ভূত এক দম্পতি, উগুর শাহিন ও তার স্ত্রী ওজলেম টুরেসি। যার এই বায়োএনটেক কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা।
জানা যাচ্ছে, ১২ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর শাহিন ও তার স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট ওজলেম টুরেসি জার্মানির মাইনৎসে এই বায়োএনটেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে যে কোম্পানীর কর্মরত আছেন প্রায় ১৫০ ০কর্মী। সূত্রের খবর, মূলত ৫৫ বছর বয়সি শাহিনের জন্ম তুরস্কে। বাবা-মা’র সাথে একসময় তিনি জার্মানিতে চলে আসেন। মেডিসিন ও গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এরপর কোলোন ও হামবুর্গে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক হিসেবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন। মলিকিউলার মেডিসিন ও ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন, আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি।
এই দম্পতির ওজলেম টুরেসি৫৩ বছর বয়সি। জন্ম জার্মানিতে। কিন্তু তার বাবা-মা তুর্কি। হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিউনোলজিস্ট টুরেসি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন। তিনি ২০০০ সালের জানুয়ারিতে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তখনই তার আশঙ্কা হয় এটি মহামারী রূপ নেবে এবং ওই সময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা প্রসঙ্গে বায়োএনটেকের প্রধান উগুর শাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে। এরপর এক যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যানও জানিয়েছেন, ‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে। এই করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। যাদের আগে কখনো করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা যায়, টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি।
জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এই ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। এবার, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডি-এর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে।’