‘সিটি ভ্যালু’র মাধ্যমে উপসর্গহীন করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমাতে এবার উদ্যোগী স্বাস্থ্য দফতর

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: করোনা সংক্রমণের জেরে সপ্তাহখানেক ধরেই রাজ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত্যু সংখ্যা রীতিমত চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, গুরুতর অসুস্থ তো বটেই, এমনকি উপসর্গহীন এবং কো-মর্বিডিটি থাকা রোগীরাও আচমকা মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সি-টি ভ্যালু পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহল। উল্লেখ্য, বিশ্বের মধ্যে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে প্রথম মৃত্যু হার কমিয়েছিল ইতালি।
উপসর্গহীন কিন্তু মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি হিসেবে কাদের চিহ্নিত করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর?
চিকিৎসকদের দাবি, কখনও কখনও সামান্য জ্বর সঙ্গে সামান্য শুকনো কাশি থাকলে প্রাথমিক ভাবে করোনার উপসর্গ মনে করা হচ্ছে। যদিও এরা সব সময়ে করোনা পজিটিভ নাও হতে পারেন। কারণ এগুলি আরও অনেক অন্যান্য রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ। আবার কারোর গন্ধ না পাওয়া বা পেট খারাপের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে এলেও তাঁদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এরাই উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগী। সেই সমস্ত উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীদের বর্তমানে সেফ হোম কিংবা হোম আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাঁদের প্রায় সম্পূর্ন অংশ আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। কিন্তু তাদের চিহ্নিত না করা হলে বাড়ছে বিপদ।
রাজ্যে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে বেশ কিছু করোনা উপসর্গহীন রোগীরও। যে কোনও ক্ষেত্রেই উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগীদেরও যদি মৃত্যু হয়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও মুশকিল হতে পারে চিকিৎসকদের। তাই এদের মধ্যে কারা কারা ভিতরে ভিতরে গুরুতর অসুস্থ, তা জানতে সি-টি ভ্যালু পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহল। যাতে করোনা সংক্রমণ রোগীকে ধাক্কা দেওয়ার আগে গোড়াতেই তাকে আটকানো সম্ভব হয়।
কিন্তু কি এই সি টি ভ্যালু? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিটির পুরো নাম ‘সাইকেল থ্রেশোল্ড ভ্যালু’। এই পদ্ধতিতে মানবদেহ থেকে লালা রসের নমুনা সংগ্রহের পর এই মেশিনের মাধ্যমে একজন মানুষের দেখে কত পরিমাণ ভাইরাসের পরিমাণ আছে তা দেখা হয়। কারণ ভাইরাসের উপস্থিতির পরিমাণই ওই মানুষের দেহের পক্ষে কতটা বিপদজনক তা নির্ণয় করে। আর তার ওপর নির্ভর করে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেবার কাজ শুরু করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সেক্ষেত্রে উপসর্গহীনদেের মধ্যেও কম গুরুতর ও বেশি গুরুতরদের বেছে নেওয়া সম্ভব হবে। তার তাতেই দ্রুত সুস্থ হবেন অনেকে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে করোনা চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা শুভঙ্কর বাগচী নামে এক চিকিৎসক জানান, প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত হলেই তাকে কোভিড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় স্ট্র্যাটেজি বদলে উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীদের সেফ হোমে বা হোম আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা এবং উপসর্গ যুক্ত করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা হতে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেস স্টাডি করে দেখা গিয়েছে একটি দেশে বেড়ে চলা করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমাতে সি টি ভ্যালুর ওপর জোর দিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। ল্যাবেই এই পদ্ধতিতে রোগীর অবস্থা জেনে নেওয়া সম্ভব।’ স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, স্ট্র্যাটেজি বদল করে সি-টি ভ্যালু করোনা আক্রান্তদের থেকে কম কিন্তু উপসর্গহীনদের থেকে একটু বেশি হলেও এবার হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তবেই করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ মৃত্যুহার আটকানো সম্ভব হবে।