fbpx
অন্যান্যপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

উন্নতমানের সৌদি খেজুর চাষ…

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফলের মধ্যে খেজুর অতি পরিচিত একটি নাম। বিশ্বের যে কোনও দেশের গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে খেজুর  চাষ হতে পারে। যে জায়গায় খেজুর চাষ হবে, সেখানে তাপমাত্রা যদি ৫৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়, তবে তা খেজুর চাষের পক্ষে সহায়ক। একটা খেজুর গাছের পরিপূর্ণ রূপ নিতে সময় লাগে ৪-৮ বছর। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে খেজুর চাষের জন্য গাছটিকে বাড়তে দিতে হবে ৭-১০ বছর। মধ্য প্রাচ্যে খেজুর চাষ প্রচুর পরিমানে হয়।

আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও খেজুরের চাষ করা হয়ে থাকে। শীতকালে গ্রামবাংলায় খেজুর গাছের রসও সংগ্রহ করা হয়। একেও চাষেরই একটা অঙ্গ বলা যেতে পারে। ভারতে দেশীয় খেজুরের চাহিদা যথেষ্ট রযেছে। তাই ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির খেজুরের চাষ করে থাকেন চাষীরা। খেজুর শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। এতে চিনি ছাড়াও ক্যালসিয়াম, নিকোটিনিক অ্যাসিড, আয়রন এবং পটাশিয়াম বর্তমান। খেজুর কোলোন ক্যানসারের প্রতিষেধক। আমাদের দেশে রাজস্থান, গুজরাট, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে প্রচুর পরিমানে খেজুর চাষ হয়ে থাকে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এর প্রজনন হয়।

 আরও পড়ুন: ১০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে রাফাল, থাকবেন রাজনাথ সিং

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে টিস্যু কালচার করবার সব থেকে প্রসস্ত সময। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে বর্তমানে কেউ চাইলে নিজের বাড়ির বাগানের অল্প পরিসরেও খেজুর চাষ করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে মূলত সৌদি খেজুর চাষ হয়ে থাকে। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম অঞ্চলে এই খেজুরের চাষ টিস্যু কালচারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে করা চারা লাগালে ৩ বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। খেজুরের বীজ থেকে তৈরি চারা লাগানোর জন্য ৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৬ ফুট প্রস্থ এবং ৩ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে তাতে প্রথমে কিছু খড়-কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিতে হবে। এতে মাটি শোধিত হবে। এরপর ওই গর্তে ৩০ শতাংস মোটাবালি, ৪০ শতাংস পঁচা গোবর এবং ৩০ শতাংস উর্বর বেলে-দো-আঁশ মাটি  দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।

                               আরও পড়ুন: করোনার দাপটে বন্ধ হল কোরিয়ার সংসদ

এই মাটিতে ১০-১৫ কেজি নারকেলের ছোবড়ার গুড়ো এবং সমপরিমান কেঁচোসার ও ১ কেজি হাড়ের গুড়ো মেশানো উচিত। রাসায়নিক সার হিসাবে ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, ডিএসপি ৪০০ গ্রাম ও এনওপি ৫০০ গ্রাম দিতে হবে। এছাড়া জিঙ্ক সালফেট, ম্যাক্স সালফেট, বোরণ ও লৌহ জাতীয় সার প্রতি গর্তের জন্য ১০০ গ্রাম করে মোট ২০০ গ্রাম মেশানো প্রয়োজন। এছাড়া রোগপ্রতিরোধ করার জন্য ছত্রাকনাশক ও দানাদার কীটনাশক ১০০ গ্রাম করে মোট ২০০ গ্রাম ওই মাটিতে মেশাতে হবে। এইভাবে জমি তৈরির পর ভালো করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দু’সপ্তাহ ফেলে রেখে খেজুরের চারা রোপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মাটির মাঝখানে উঁচু করে চারাটি রোপন করতে হবে। গর্তের চারধারে ২ ফুট বৃত্তাকারে ১০-১২ ইঞ্চি চওড়া এবং ১২ ইঞ্চি গভীর করে নালা কেটে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে প্রতিটা গাছ সমউচ্চতায় লাগানো হয়।

 

গাছ একটু বড় হলে চারধারে বাঁশের কঞ্চি ও বস্তা দিয়ে গাছটিকে ঢেকে দিতে হবে যাতে গাছটি সুরক্ষিত থাকে, সোজা থাকে। খেজুরগাছের গোড়ায় যে জল জমে না থাকে। ভালো করে নালা কেটে দিলে জল ওখানে জমবে, ফলে মাটি ভিজে থাকবে, ঘন ঘন সেচ দিতে হবে না। গাছের কোনও পাতা যদি শুকিয়ে যায় তাহলে সেটি কেটে ফেলতে হবে এবং ওই কাটা জায়গায় ছত্রাকনাশকের প্রলেপ দিতে হবে। এই সৌদি খেজুর গাছে বছরে চারমাসের ব্যবধানে সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি এবং ফলন ভালো হবে।

 

 

এছাড়া বছরে একবার করে গাছের বয়স অনুযায়ী ১০০-২০০ গ্রাম  অণুখাদ্য দিতে হবে। পুরুষ ও স্ত্রী খেজুর গাছ ভিন্ন ভাবে জন্মায়। তাই স্ত্রী খেজুর গাছে ফুল আসলেই পুরুষ গাছ থেকে পরাগ নিয়ে পরাগায়ন করতে হবে।  এরপর ফল ধরতে শুরু করলে সুস্থ ৭-১০ কাঁদি রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কাঁদিগুলোকে কেটে ফেলা জরুরী। ফল হতে শুরু করলে লক্ষ্য করা যায় ফলের ভারে খেজুর গাছের পাতা নুয়ে যায়। অন্যদিকে খেজুর ফল যাতে বাড়তে পারে তার দিকেও নজর দেওয়া জরুরী। তাই ফল ধরার শুরুর দিকে ভালো করে দড়ি দিয়ে খেজুর ফলকে উঁচু কাণ্ডের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে এবং ফল আকারে বাড়তে শুরু করলে মশারির নেট দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।

 

এতে করে স্বাভাবিক ভাবে খেজুর ফল বড় হতে পারবে। পরাগায়নের ৫-৬ মাস পরে ফল কাটার উপযুক্ত হয়। এইভাবে উপযুক্ত মাটি এবং পরিচর্যা পেলে একটি খেজুর গাছে প্রায় ৭০-১৫০ কেজি খেজুর পাওয়া যায়। এইভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত পদ্ধতিতে সৌদি খেজুরের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।

Related Articles

Back to top button
Close