সবেদার ফলন পদ্ধতি…

নিজস্ব প্রতিনিধি: সর্বভারতীয় স্তরে এবং দেশের বিভিন্ন অংশে সবেদা নামক ফলটি ভীষণই জনপ্রিয়। হিন্দি ভাষা-ভাষীরা এই ফলকে চিকু নামে জানেন। সবেদার ফলন যেন খোলা জমিতে করা যায তেমনই খুব সহজে এই গাছ বাগানের টবেও করা যেতে পারে। অবশ্য সেই ক্ষেত্রে অন্তত ২০০ লিটারের টবে এই গাছ লাগাতে হবে। গোবর ও বালি যুক্ত সার দিয়ে সবেদা গাছের জন্য মাটি তৈরি করতে হবে।
সবেদার বীজ থেকেও গাছ হতে পারে কিন্তু সেই গাছ বাড়তে এবং ফলন হতে বেশ সময় লাগে। সেই কারণে আগ্রহী চাষিভাইরা স্থানীয় বাজারের নার্সারি থেকেও সবেদা গাছের চারা কিনতে পারেন। গ্রাফটিং বা কলম থেকে যে গাছ জন্ম নেয়, সেই গাছের ফলন খুব তাড়াতাড়ি এবং উচ্চমানের হয়। এই ফল ভিটামিন-এ এবং ই-তে সমৃদ্ধ। সবেদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিযাম থাকায় এর উপকারিতা অপরিসীম। ফলটি রক্তচাপও নিযন্ত্রণে রাখে।
আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে সংকটে উত্তর দিনাজপুর জেলার আনারস চাষিরা
সবেদা ফলটি বৈচিত্রময়। কোনওটি লম্বা আবার কোনওটি গোল আকৃতির হয়। এই ফল পাকতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। এক একটি ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনেরও হয়। প্রতিটি গাছে প্রায় ৭০০ থেকে ১০০০টির মতো ফল হয়। জমির গাছগুলি মহীরুহতে পরিণত হয়। গ্রীষ্মকালের বেশিরভাগ সময় জুড়েই সবেদার ফলন ভালো
রকমের হয়। সবেদার বীজ থেকে গাছ হতে বেশি সময় লাগে না কিন্তু সহজে ফলের দেখা মেলে না। সেই কারণে হাইব্রিডের গাছ লাগানোটাই শ্রেয়। কারণ এই গাছে ফুল এবং ফল খুবই তাড়াতাড়ি ফলে। গ্রীষ্মের শেষে বর্ষাকালে যদি কেউ সবেদার চাষ করতে শুরু করে তাহলে সেক্ষেত্রে শীতকালের শেষের দিকে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফলটি পাকতে শুরু করে। বছরে দুবার অনায়াসেই সবেদার চাষ করা যেতে পারে। ইচ্ছে হলে নিজের বাড়ির টবেই সবেদা গাছ লাগিয়ে ফলের আশা করা যেতে পারে। আবার জমিতেও গাছ লাগিয়ে ফল ফলানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন: নদিয়ায় কাজলি জাতের পটল চাষ
তবে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে সবেদা গাছ যে মাটিতে লাগানো হবে, সেই মাটির ড্রেনেজ সিস্টেম যেন ভালো হয়।কোনওভাবেই সেই মাটিতে যে জল না জমে কারণ মাটিতে বেশি মাত্রায় জল জমে থাকলে গাছের শেকড় ভালোভাবে বাড়তে পারে না। মাটি তৈরি করতে হবে বিভিন্ন সার দিয়ে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেখানে বালিও মেশানো হয়। সারের মধ্যে পটাসিয়াম সালফেট এবং ডাইমোনিয়াম ফসফেট ব্যবহার করলে গাছের বৃদ্ধি খুব ভালো হয় এবং ফলও বেশ মিষ্টি হয়। গ্রীষ্ম বা গরম গাছের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হলেও ফল ফলার সময় একটু ঠান্ডার প্রয়োজন হয়।
ঠান্ডা যদি একদমই না থাকে সেক্ষেত্রে গাছের ফুল ভীষণ তাড়াতাড়ি ঝরে যায়। সেই কারণে ফল ঠিক মতো ফলে না। এছাড়াও পনেরো দিন অন্তর এনপি ফার্টিলাইজার জলের সঙ্গে মিশিয়ে পাতার ওপর স্প্রে করা ভীষণই জরুরি। পাতার ওপর স্প্রে করার পাশাপাশি এটি ফলের ওপরও স্প্রে করা যেতে পারে।
অন্যদিকে ছোট ছোট দানার এক রকমের ফার্টিলাইজার মাটির সঙ্গে মেশানোটাও প্রয়োজন। আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে গোবর সার ব্যবহারের বিষয়টি। মাটিতে গোবর সার মেশালে খুব তাড়াতাড়িই গাছের ডালপালা বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তী সময় ঠিক ততটাই তাড়াতাড়ি সেগুলো শুকিয়ে যাবে। অত্যাধিক গোবর সার ব্যবহার করলে মাটি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, যা গাছ, ফুল এবং ফলের পক্ষে ক্ষতিকারক। এই সার যদি বর্ষা এবং শীতকালে ব্যবহার করা হয়, তবে গাছের খুব একটা ক্ষতি হয় না।
যে কোনও ফলের গাছ লাগানোর আগে সব দিক মাথায় রেখে আগে ভালো করে মাটি তৈরি করে গাছের চারা লাগানোটাই উচিত। এই সব কিছুর ওপর নির্ভর করছে ফলন ও তার স্বাদ। এক্ষেত্রে একটা কথার উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে কিউবি আর চিকু বা সবেদাকে একই ফল ভেবে ভুল করে থাকেন। বলে রাখা ভালো যে এই দুটি ফলই কিন্তু একে ওপরের থেকে পৃথক। শুধুমাত্র আকৃতি বা চেহারার দিক থেকে হয়তোবা কিছুটা মিল রয়েছে।