দু’দিন খবর নেই! ট্রলির পিছনে ছুটেই কলকাতা মেডিক্যালে মেয়ের মৃতদেহের সন্ধান পেলেন বাবা

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ফের সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় মেয়ের ২ দিন ধরে খবর না পেয়ে বাবা সোজা চলে এসেছিলেন কলকাতা মেডিক্যালে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে নিজের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আচমকাই একটি মৃতদেহ ট্রলি করে হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ হয় মেয়ের বাবা নারায়ণ মজুমদারের। দ্রুত দেহের ট্যাগের দিকে তাকাতেই তিনি দেখেন, এই মৃতদেহ তার মেয়ে ইতি টিকাদারের (৩৬)।
পরিবার সূত্রে খবর, বেশ বছর কয়েক আগে বিয়ে হয়েছে পানিহাটি সুখচরের বাসিন্দা ইতি টিকাদারের। তার এক সন্তান রয়েছে, যে সম্প্রতি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। গত ২১ জুলাই কিডনি ও সুগারের সমস্যার কারণে ওই মহিলাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। বেশ কিছুদিন তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতেও ভর্তি ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন চিকিৎসক। তারপরেই তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপরেই তাকে গ্রিন বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা হয়।
তারপর থেকে হাসপাতালের হেল্পলাইন মারফত মেয়ের খোঁজখবর নিত পরিবার। কিন্তু ২ দিন যাবৎ কোনও খোঁজখবর না পেয়ে বুধবার সকালে বাবা সটান এসে হাজির হন কলকাতা মেডিকেল কলেজে। প্রথমে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, তার মেয়ে ভালো নেই।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরেও মেয়ের কোনও খবর না পেয়ে শেষে অসহায় বাবা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেন। তখনই গ্রিন বিল্ডিং থেকে ট্রলি করে একটি মৃতদেহ ঢেকে চেপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ট্রলির পিছন পিছন গিয়ে দেখলেন, করোনা রোগীর নিয়মমত মৃতদেহ প্যাক করা হয়েছে আর সেই প্যাকিংয়ের গায়ে আটকানো কাগজ দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল বাবার। দেহের ট্যাগে আটকানো রয়েছে তার মেয়ের নাম।
বিষয়টি নিয়ে যে কোথাও একটু সমন্বয়ের অভাব হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালে সুপার ডাক্তার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বুধবারই ভোর রাতে ওই রোগী মারা যায়। হেল্পলাইনে ও স্বাস্থ্য দপ্তরে জানানো হয়েছিল তবে কোন ভাবে ওই পরিবারকে জানানো যায়নি। ওরা সরাসরি হাসপাতালে চলে আসায় কোনও ভাবে বিষয়টি ওরা জানতে পারেননি।