নবান্ন অভিযানকে দিনভর উত্তেজনা, বিজেপি কর্মীদের আটকাতে জলকামান থেকে লাঠিচার্জ, পালটা আক্রমণ পুলিশকে

যুগশঙ্খ, ওয়েবডেস্ক: বিজেপির নবান্ন অভিযানকে ঘিরে আজ দিনভর রাজনৈতিক উত্তেজনায় সরব থাকল গোটা কলকাতা। আগে থেকে বিজেপি নেতাকর্মীদের নবান্ন পথে আটকাতে সমস্ত ফোর্স নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন পুলিশকর্মীরা। এর বিজেপি কর্মীরা একসময় প্রশাসনের সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান থেকে, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো কিছুই বাকি থাকল না পুলিশের। ধস্তাধস্তিতে মাথা ফাটল এক বিজেপি কর্মীর। সেই সঙ্গে পুলিশকে পালটা আক্রমণ করতে দেখা গেছে বিজেপি কর্মীদের। আহত কমপক্ষে ৩০ পুলিশ কর্মী। কোথাও পুলিকে লাঠি হাতে তাড়া করেছে বিজেপি কর্মীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল ছোড়া সব কিছুরই সাক্ষী থাকল শহর কলকাত।
কলকাতার তিন প্রান্ত থেকে ৩টি মিছিল যাওয়ার কথা থাকলেও আগাম নোটিশ ছাড়াই বেশকিছু বিজেপি কর্মী লালবাজার অভিযান শুরু করে। পুলিশ প্রথমে তা আন্দাজ করতে পারেনি। এর মধ্যেই এমজি রোড ও রবীন্দ্র সরনীর সংযোগস্থলে কলকাতা পুলিশের একটি পিসিআর ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিন বড়বাজার থেকে নবান্নগামী একটি মিছিলে ছিলেন বিজেপি নেত্রী মীনাদেবী পুরোহিত। সেই মিছিল আটকাতেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের খন্ডযুদ্ধ বেধে যায়। মাথা ফাটে মীনাদেবীর। ওই ঘটনায় পুলিশকেই দায়ী করেছে বিজেপি। পাশাপাশি ওই ঘটনার উল্লেখ করে কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখেছে জাতীয় মহিলা কমিশন।
হাওড়ায় বিজেপি কর্মীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হল পুলিশকে। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা গোলমাল না করে পুলিসের গাড়িতে উঠে গেলেও শুভেন্দু অধিকারী ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে আটকাতে গিয়ে বচসা বাধে পুলিশের সঙ্গে। ধাক্কাধাক্কি ও পুলিশের সঙ্গে বচসার পর শুভেন্দু পুলিসের গাড়িতে উঠে পড়েন। তবে মহিলা পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁর বার্তা, “ডোন্ট টাচ মাই বডি। ইউ আর লেডি আই অ্যাম মেল। মহিলা পুলিস আমার গায়ে হাত দিয়েছেন…আমার গায়ে হাত দেবে কেন…মমতা লেডি কিম…মহিলা পুলিশ আমার গায়ে হাত দিয়েছে।” এই ঘটনা নিয়ে সুকান্তকে প্রবল ভাবে কটাক্ষ করে কুণাল ঘোষ বলেছেন, শুভেন্দুর “ডোন্ট টাচ মাই বডি” শুনে সপ্তপদী সিনেমার রিনা ব্রাউনের ‘ডোন্ট টাচ মি’র কথা মনে পড়ে গেল। শুভেন্দুকে ‘আলুভাতে’ নেতা বলে কটাক্ষ করেন কুণাল।
অন্যদিকে আজ শান্তিপূর্ণ ভাবে গ্রেফতার বরণ করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পুলিশ ও প্রশাসন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে দমন ও পীড়ন করেছে। আজ এমন একধরনের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল, যে ব্যারিকেড ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন জরুরি অবস্থার সময় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এখানে তৈরি করেছিলেন। হাওড়া সহ আরও নানা জায়গায় বিজেপিকে আটকাতে এই ব্যারিকেড বানানো হয়। তারপর জলকামান দাগা হয়। এখন ভিজে অবস্থাতেই শিবপুর থানায় বসে আছি। পুলিস আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। পুলিশের কথামতো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গ্রেফতার বরণ করেছি।’
মঙ্গলবার খড়গপুরে দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘মিছিলে লোক হয়নি। ওদের বেলুন ফুটো হয়ে গিয়েছে। ওদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই’।
অন্যদিকে আজকের বিজেপি নবান্ন অভিযান নিয়ে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লিখেছেন, আজ শুধু রাজ্য নয় গোটা দেশ দেখল বিজেপির হুলিগানরা এই শহরের কী দশা করতে পারে। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে ভেবে দেখুন এরা ক্ষমতায় এলে কী করবে! বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করায় বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ। এবার সময়ে এসেছে, গোটা দেশের মানুষ এদের প্রত্যাখান করুক।