করোনা যোদ্ধা চিকিৎসকের মৃত্যুতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা, অভিভাবকহীন শ্যামনগরবাসী
অলোক কুমার ঘোষ, ব্যারাকপুর: করোনা কেড়ে নিয়েছে শ্যামনগরের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ডাঃ প্রদীপ ভট্টাচার্যকে। সোমবার তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে ভাটপাড়া শ্মশানে তার দেহ সৎকার হয়। শ্যামনগরের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচর্য্যের মৃত্যু যেন আপামর শ্যামনগর বাসীকে অভিভাবকহীন করে তুলেছে। এক সময় সকলের প্রিয় ডাক্তার বাবু করোনা মহামারীর তোয়াক্কা না করে বাঁচিয়ে তুলেছিল অসংখ্য শ্যামনগর বাসীর প্রাণ। ডা: প্রদীপ ভট্টাচার্য যিনি করোনা যোদ্ধা হিসেবে মাস খানেক আগেও সন্মানিত হয়েছেন তাঁর চিকিৎসা সেবা দানের জন্য। সেই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে করোনাতেই। চোখের জলে করোনা যোদ্ধা ডা: প্রদীপ ভট্টাচার্যকে বিদায় জানিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরবাসী। তবে চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের মৃত্যু অভিভাবকহীন করে তুলেছে শ্যামনগর বাসীকে। এখন যেকোনও অসুস্থতায় শ্যামনগরবাসী ছুটে যেতে পারছে না ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্যের কাছে।
তাঁর চেম্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শ্যামনগরবাসী। ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্যকে হারিয়ে যে শুন্যতা তৈরি হয়েছে শ্যামনগরের বুকে তা ভেবে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা।
শ্যামনগরের সাধারন মানুষ তাকে ভগবান হিসেবেই দেখতেন। করোনা থাবা লকডাউন হয়েছে সর্বত্র। কিন্তু ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য কোন দিনই কোন রোগীকে চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেননি। আর চিকিৎসা করতে করতে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন এক সময়। গত ৮ই জুলাই প্রথম তার করোনা উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। ১৩ জুলাই তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরই মুকুন্দপুরে এক বেসরকরি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেই থেকেই করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন তিনি।এর মাঝেই করোনা আক্রান্ত হন ডাক্তার বাবুর স্ত্রী ও ছেলে। তবে তাঁরা করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু ১লা আগস্ট তিনি হৃদ রোগে আক্রান্ত হন। তার অবস্থা অত্যন্ত সংকট জনক হয়ে যায়। প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্রচুর অর্থের। সেই অবস্থায় নিজেদের “ভগবান” ডাক্তার বাবুকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য এগিয়ে আসেন শ্যামনগরের বাসিন্দারা। তারা নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে ডাক্তার বাবুর চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে ডাক্তার বাবুর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা।
কিন্তু সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে ১০ আগস্ট বিকেলে শ্যামনগরের ভগবান তথা করোনা যোদ্ধা ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। ডাক্তার বাবুর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা শ্যামনগরে। করোনাতে মারা গেলে শ্যামনগরের মানুষ শেষ বারের জন্য ডাক্তার বাবুরকে চোখের দেখা দেখতে চাইছিলেন। তাই যে অর্থ ডাক্তার বাবুর চিকিৎসার জন্য চাঁদা হিসেবে তোলা হয়েছিল সেই অর্থ ও ডাক্তার বাবুর পরিবারের তরফ থেকে দেওয়া অর্থ মিলিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের বিল বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিল মিটিয়ে ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য মরদেহ শেষ বারের জন্য শ্যামনগরে নিয়ে আসা হয়। ভাটপাড়া পৌরসভা তাদের নিজেদের তত্বাবধানে মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রদীপ বাবুর মরদেহ শ্যামনগর বটতলায় শেষ বারের জন্য তার জন্মভূমিতে নিয়ে আসে। শ্যামনগরের বাসিন্দারা তাদের প্রিয় ডাক্তার বাবুকে শেষ দেখা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মধ্যরাতে।
[আরও পড়ুন- সবুজায়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা দিবসের দিন ১০ হাজারের বেশি চারা গাছ রোপনের উদ্যোগ দিনহাটায়]
এদিন শ্যামনগরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য শুধু একজন ডাক্তার ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের ভগবান। উনি কোন দিন আমাদের কাউকে কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেন নি। এই করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে অনেক ডাক্তার বাবু জ্বর শুনলেই আর দেখছিলেন না, সেখানে প্রদীপ বাবু নিয়ম করে সব রোগের রোগীদের চিকিৎসা করে গেছেন। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। ডাক্তার বাবুর মত মানুষ কম হয়। উনি এতটা ভালো মানুষ ছিলেন যে উনি নিজে মুখ্যমন্ত্রীর করোনা তহবিলে কিছুদিন আগেই ৫১ হাজার টাকা দান করেছিলেন। আজ আমরা আমাদের ভগবানকে হারালাম।”