‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ রূপায়নে সংগ্রাম কমিটির দাবি টেলি কনফারেন্সে
ভাস্করব্রত পতি, তমলুক: বর্ষা আসন্ন। কিন্তু ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য দোলাচলতা আজও মেটেনি। প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যার মুখোমুখি হতে হবে ঘাটালবাসীকে। এখানকার তৃণমূলী সাংসদ দীপক অধিকারীও কোনো সদর্থক উদ্যোগ না নেওয়ায় ফের অথৈ জলে পড়বে ঘাটালবাসী। সেই দিকে তাকিয়ে সম্প্রতি ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ রূপায়ন সংগ্রাম কমিটি’র উদ্যোগে দুই মেদিনীপুর জেলার ১৩ টি ব্লক এলাকার নেতৃবৃন্দের টেলি কনফারেন্সে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার পরে পরেই ঘাটালের প্রথম সাংসদ নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান সংসদে। সেই মোতাবেক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু গঠন করেন ‘মান সিং কমিটি’। অবশেষে ঐ কমিটির সুপারিশ মেনে ১৯৭৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঠন করে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। এরপর ১৯৮২ সালের ১০ ই ফেব্রুয়ারি সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় রূপোর কোদাল দিয়ে শিলাবতী নদীর পাড়ে মাটি কেটে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বরাদ্দ করা হয় ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ঐ শেষ। এরপর নিয়মিত বন্যা ঘাটালের প্রতি বছরের ঘটনা।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হলে দাসপুর ১, ২, চন্দ্রকোনা ১, ২, ঘাটাল, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, ডেবরা, মেদিনীপুর এবং কেশপুর সহ ১৩ টি ব্লকের ১৬৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ১৭ লক্ষ মানুষের উপকার হোতো। প্রথমে ২০১৪ সালে ২১৫০ কোটি টাকার ডিপিআর তৈরি করে সেচ দপ্তর। অবশেষে ২০১৫ তে ১২১৪ কোটি টাকার ডিপিআর জমা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রকের আপত্তিতে। বর্তমানে প্রস্তাবিত খরচ দাঁড়িয়েছে ১২৩৮ কোটি টাকা। সেচ দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৪৭ কিমি দীর্ঘ শিলাবতী, কাঁকি, চন্দ্রেশ্বর, পলাশপাই, দুর্বাচটি, শোলটেপা, ওল্ড কাঁসাই, নিউ কাঁসাই ইত্যাদি নদী ও খাল সংস্কার করা হবে। কিন্তু হয়নি কিছুই।
আরও পড়ুন: বসিরহাটে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভ, গ্রেফতার ৩ নেতা
একটানা বৃষ্টি হলেই ঘাটাল পৌরসভার ২১ টি ওয়ার্ড জলের তলায় চলে যায়। এই শহরকে তাই বলা হয় ‘মেদিনীপুরের ভেনিস’। প্ল্যান করা হয় শিলাবতী নদীর ওপর ছয় মিটার উঁচু বাঁধ তৈরি করা হবে। যাতে শিলাবতীর জল উপচে ঘাটালকে ডোবাতে না পারে। এছাড়া ঘাটাল এলাকায় একটা পাঁচ হাজার কিউসেক ক্ষমতার পাম্প বসানো হবে। এর দ্বারা জমে থাকা জল পাম্প করে দ্রুত নিষ্কাশন করা যাবে। সবকিছুই এখনও পরিকল্পনার স্তরে। তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ভোটের সময় এই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এক ছটাক কাজেও অগ্রগতি ঘটেনি।
এদিনের সভায় শুরুতেই ঔরঙ্গাবাদে রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের স্মৃতিতে শোকজ্ঞাপন করা হয়। সভায় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় অংশ নেন, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রশান্ত সামন্ত, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক দুলাল কর, কমিটির সভাপতি ডাঃ বিকাশ চন্দ্র হাজরা প্রমূখ।
নারায়নবাবু জানান,এই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বিষয়ক যেসব ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে সেচ দপ্তরের অধীনে, সেগুলি অবিলম্বে শুরু করতে হবে এবং বর্ষার পূর্বে বন্যা প্রতিরোধের যে কাজগুলি অবিলম্বে করা দরকার সে বিষয়ে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সেচমন্ত্রী ও দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে স্মারকলিপি ই.মেলে জমা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হবে।