কলকাতাগুরুত্বপূর্ণপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন
কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরোধিতা করেও চাষীদের স্বার্থে পাল্টা আইন আনতে নারাজ রাজ্য প্রশাসন

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: সামনে রয়েছে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যের সমস্ত শ্রেনীর মানুষের স্বার্থ যাতে অক্ষুন্ন থাকে, তার জন্য তৎপর রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু সবজির ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরোধিতা করেও চাষীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ক্রেতাদের সুবিধার্থে পাল্টা আইন আনার পথে হাঁটতে পারছে না রাজ্য।
কারণ কম ফলনের পর চাষীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গেলে ক্রেতাদের সমস্যা, আবার ক্রেতাদের দিকে দেখতে গেলে সবক্ষেত্রে চাষীরা তাদের সহায়ক মূল্য পাবেন না। তাই আইন না এনে বিকল্প কোন পথে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যায়, আপাতত তারই পথ খুঁজছে নবান্নের শীর্ষ কর্তারা।
কেন্দ্রের সংশোধিত কৃষি আইনের কারণে চাষিরা সহায়ক মূল্য পেলেও বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধি রীতিমতো বিপদে ফেলে দিয়েছে সাধারণ মানুষকে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের দাবি, কেন্দ্রের এই আইনের কারণে মজুতদাররা অতিরিক্ত সবজি মজুত করার ফলে বাজারে আকাল দেখা দিয়েছে। কিন্তু তার পাল্টা নতুন কোনও কৃষি আইন আনতে এখনই প্রস্তুত নয় রাজ্য প্রশাসন। কারণ তাতে কৃষক স্বার্থবিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবক্ষেত্রে চাষীদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ফসল কিনতে পারে না সরকার। তাই কিছু ক্ষেত্রে এজেন্ট মারফত বিক্রি করতে হলে চাষীরা তাদের মূল্য চাষিরা তাদের মূল্য পেলেও এজেন্টের মারফত দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে।
কেন্দ্রীয় আইনে চুক্তি চাষ, কৃষি ক্ষেত্রে অবাধ মজুতদারি, বেসরকারি বিনিয়োগ, প্রাইভেট মার্কেট ইয়ার্ড, ই–ব্যবস্থায় কৃষি পণ্য বিক্রি ইত্যাদি রয়েছে। ২০১৪ সালে পর পর দুটি সংশোধনী এনে কৃষি বিপণন দফতর এগুলির সবই রাজ্যে ছাড়পত্র আগেই দিয়ে রেখেছে। তাই নতুন আইন আনা হলে রাজ্যকে ক্ষেত্রগুলি পরিবর্তন করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে চাষীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন না থাকলে তাতে প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সে। কিন্তু ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বিকল্প কোনও পথ আনতে হবে রাজ্যকে।
কৃষি কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যের কৃষকরা স্বাধীনতার পর থেকে কখনই তাঁদের ফসল নির্দিষ্ট কোনও মান্ডিতে বিক্রি করতে বাধ্য ছিলেন না। এখানে বাজারের সুবিধার জন্য নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি তৈরি হয়েছিল। নতুন কেন্দ্রীয় আইনে সেই ‘শৃঙ্খল’ ভাঙা হয়েছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি নতুন আইনে দেওয়া নেই বলে বলা রয়েছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্দিষ্ট হলে চাষিদের ৩০% সেই দাম পেয়ে থাকেন।
বাকিরা বাজার চলতি দামেই বিক্রি করেন। রাজ্যের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৪২ লক্ষ চাষি নথিভূক্ত হয়েছেন। কিন্তু সরকারি দামে ধান বিক্রি করেন মাত্র ১২ লক্ষ চাষি। বছরে ১৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হলেও সরকার ধান কেনে মাত্র ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। কোন আইন করে এই বিষয়টি এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
বরং কোন কোন ক্ষেত্রে চাষীদের কাছ থেকে ক্রেতাদের কাছে ফসল পৌঁছানোর মধ্যে দাম বৃদ্ধি হচ্ছে, তার বিস্তারিত সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারা।