
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: রবি সন্ধ্যাতেই শেষযাত্রায় চোখের জলে ‘অপু’কে চির বিদায় জানিয়েছে সবাই।শিল্পী হিসেবে যে আকাশছোঁয়া সম্মান আর সাগরছেঁচা ভালবাসা তিনি পেয়েছেন, বাংলার মানুষই তাঁকে তা দিয়েছে। বেঁচে থাকতে বারবার বলতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বিদায়বেলাতেও তিনি হয়ে উঠলেন মানুষের সৌমিত্র। শেষ বিদায়ের মুহুর্তেই তৈরি হয়েছে আবেগঘন মুহুর্ত। যেখানে উঠে এসেছে একে অপরের প্রতি ঋণী হয়ে থাকার কথা। সৌমিত্রকন্যা যেমন শোনালেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঋণী হয়ে থাকার কথা তেমনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানালেন পৌলমীর পিতার কাছে বাংলা সিনেমা ঋণী হয়ে থাকার কথা। আসলে লিজেন্ডদের যেমন মৃত্যু হয় না, তারা যেমন থেকে যান তাঁদের কর্মে আর বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে ঠিক তেমনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বের শূন্যস্থান পূরণ করা কখনই সম্ভব নয়। তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তৈরি হওয়া সব মুহুর্তকে বার বার দেখে আর স্মৃতি রমন্থণের মধ্যে দিয়েই তাঁকে নিজেদের মধ্যে বেঁধে রাখতে হয়।
রবিবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যের পরে তাঁর কন্যা পৌলমী বসু জানালেন তিনি এবং তাঁর পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন। কারন মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের যে সম্মানপ্রাপ্য ছিল, তার থেকেও বেশি পেয়েছেন। দিদি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তাই তাঁরা কৃতজ্ঞ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েই সৌমিত্রকন্যা জানান, ‘যখন সুযোগ পেয়েছি, বলতে চাই দিদি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাবাকে এত যত্ন, এত ভালোবেসে, এত সম্মান দিয়ে দেখাশুনো করার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের পরিবার এটা ভুলবে না। যা সম্মান ওঁর প্রাপ্য ছিল, তার থেকেও বেশি সম্মান পেয়েছেন। ভালবেসে নিজের পরিবারের মতো আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুশ্রূষার সমস্ত খরচ বহন করেছে রাজ্য সরকার।’
আরও পড়ুন: নিজের জমানো অর্থে নেতাজির মূর্তি স্থাপন করলেন অটোওয়ালা, গর্বিত বসিরহাটবাসী
বামমনস্ক সৌমিত্রের সঙ্গে কিন্তু প্রথমদিকে তৃণমূলনেত্রীর একটু দূরত্বই ছিল। এমনকি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকার সৌমিত্রকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি আসেননি। পরে অবশ্য দূরত্ব ঘোচে। ‘মহানায়ক’ পুরস্কারই দেওয়া হোক কী ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাণ প্রদান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল এই কিংবদন্তী অভিনেতার। চলচ্চিত্র উৎসবের অনুষ্ঠান, বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বারবার একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল মমতা ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। এমনকি পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম সৌমিত্রবাবুর নাতি রণদীপ বসুর চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্য বর্ষীয়ান অভিনেতা কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছিলেন। রবিসন্ধ্যায় সেই বৃত্ত কার্যত সম্পূর্ণ হল। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।