‘জঙ্গিদের দিয়ে ভোটে জিততে চান দিদি’, তোপ দিলীপের

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জেএমবি জঙ্গিদের দিয়ে বাংলায় ভোটে জিততে চাইছে তৃণমূল। বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বারবার শাসক দলকে বিদ্ধ করেছে গেরুয়া শিবির। এবার একধাপ এগিয়ে সরাসরি তৃণমূল-জামাত আঁতাঁতের অভিযোগ তুললেন দিলীপ। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফরের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা মালদহে ‘চায়ে-পে-চর্চা’ কর্মসূচিতে যোগ দেন বিজেপির-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানেই তিনি এই মন্তব্য করেন। রাজ্যের হিংসা র বাড়বাড়ন্ত, গরুপাচার সিন্ডিকেট যোগ থেকে শুরু করে জঙ্গিযোগ- স্মস্ত কিভহু নিয়ে এদিন তৃণমূল ও মমতার প্রশাসনকে তুলোধনা করেন দিলীপ ঘোষ।
দিন কয়েক আগে বীরভূমের পাইকড় এলাকা থেকে জেএমবি জঙ্গি সন্দেহে নাজিবুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। ধৃতের মোবাইলে মিলেছে প্রোটেকটিভ চ্যাট! সেই চ্যাট ডিকোড করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে একটি অভিন্ন ম্যাপও। একদিকে পশ্চিমবঙ্গ, আর অন্যদিকে বাংলাদেশের ম্যাপ মিলিয়ে সেই অভিন্ন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘। তাই সারা ভারতবর্ষে যখন উগ্রপন্থী নাই পশ্চিমবঙ্গের তখন উগ্রপন্থী ধরা পড়ছে। বোম বন্দুকের আওয়াজ এখানে যাচ্ছে । সরকারের কড়াকড়ির জেরে সারাদেশ জঙ্গিমুক্ত হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি ধরা পড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে লক্ষ রোহিঙ্গা আসছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার চায়, এই জেএমবি জঙ্গিরা এখানে আসুক, উৎপাত করুক, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করুক। তারা তৃণমূলকে জেতাবে।এই যে রাজনৈতিক স্বার্থে দেশদ্রোহীদের ব্যবহার করা হচ্ছে এটা খুবই নিন্দনীয়।’
‘ভোটের জন্য বারুদের স্তুপের উপর দাঁড় করিয়েছে বাংলাকে মমতা । গোটা ভারতবর্ষে শান্তি ফিরলেও বাংলায় চারদিকে বোমা ফাটছে বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ সীমান্তে পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গরু পাচার অনেকদিন ধরে একটা বড় সমস্যা ছিলো আর হাজার হাজার কোটি টাকা এর সঙ্গে লেনদেন হত। তার মধ্যে মালদা একটা বড় করিডোর । গরু, সোনা,ড্রাগ,বোম,পিস্তল চোরাপথে আসে। এখন কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে গরু পাচার কমেছে এবং দোষীরা ধরা পড়ছে । বহু তথ্য আমরাও পাঠিয়েছি । সরকারের কাছে তথ্য আছে। ধীরে ধীরে কাজ শুরু হয়েছে । তার মধ্যে যারা যারা যুক্ত রাজনৈতিক নেতা,পুলিশ,বিএসএফ সরকারি কর্মী কাউকে ছাড়া হবে না। সবাইকে কাঠগড়ায় আসতে হবে ।’
শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার বেসুরো জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ভবিষ্যৎবাণী করেছি যে ডিসেম্বর মাসটা আমাদের জন্য যতটা খারাপ হয়েছে,ওদের পক্ষে আরও খারাপ হবে । এবছর করোনা কমে যাবে কিনা বলতে পারছি না তবে তৃণমূল চলে যাবে এটা বলতে পারি । জীতেন্দ্রর মতো অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আমরা সবাইকে নেব ,তবে কাকে কোথায় রাখবো তা আমরা ঠিক করব।’
মঙ্গলবার সকালে মালদহের সিঙ্গাতলায় চা-চক্র থেকে দিলীপ ঘোষ ‘এগিয়ে বাংলা’ প্রকল্প নিয়ে বিঁধলেন মমতা সরকারকে। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ‘এগিয়ে বাংলা’, মহিলাদের উপর নির্যাতনে ‘এগিয়ে বাংলা’, বেকারত্ব বৃদ্ধি, পরিযায়ী শ্রমিক – সবেতে ‘এগিয়ে বাংলা’।’ রাজ্য বিজেপি সভাপতির আরও দাবি, ‘এই যে বলা হচ্ছে রাজ্যে প্রচুর চাকরি হয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখুন না, একজনও চাকরি পায়নি। হ্যাঁ, চাকরি যদি কেউ কোথাও পেয়ে থাকে, তাহলে সেটা গুজরাটে পেয়েছে, হরিয়ানায় পেয়েছে।’
আরও পড়ুন: ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে মশাল জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এরপর তিনি মানিকচকের মথুরাপুরের জনসভায় যোগদেন। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ ছাড়াও রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু জেলা সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল সহ কর্মী সর্মথকেরা। প্রথমে সায়ন্তন বসু বক্তব্য রাখতে গিয়ে আক্রমণাত্মক ভাষায় তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন ।এদিনের সভা দিলীপ ঘোষ বলেন,’ তৃণমূল বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট করতে দেয়নি বিজেপি কর্মীদের খুন করেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে জবাব দিয়েছে মানুষ। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকায় স্বজনপোষণ হয়েছে। দুয়ারে সরকার করে লাভ নেই ওটা যমের দুয়ারে চলে গেছে।’
অন্যদিকে মানিকচক বাসস্ট্যান্ডে পাল্টা সভা করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস। জেলা তৃণমূলের কো-অডিনেটর দুলাল সরকার বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি অলীক স্বপ্ন দেখছে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আছে আগামীতেও থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুয়ারে সরকার প্রকল্পে জন্য বিজেপির লোকজনও সকালে রান্না ছেড়ে দিয়ে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কোন যোগ্যতা নাই বলে প্রমাণ করে দিয়েছে। যাদের কোন যোগ্যতা নেই বলেই তারা বাইরে থেকে দিল্লি থেকে লোকজন নিয়ে এসে তাদের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের অনুসরণ করবে। বিজেপি বলছে উত্তরপ্রদেশের গুজরাটের মত দাঙ্গা করে বাংলায় জয়ী হবে।কিছু নেতৃত্ব মমতা বন্ধোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলছে তারা মমতা বন্ধোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে। তাই বাংলায় বিজেপির কিছু করার নেই। বিজেপির হাত থেকে বাংলার রাশ মুছে গিয়েছে। দিবা স্বপ্ন দেখছেন দিলীপ বাবুরা। উনাদের লোকেরাই লাইনে ভিড় জমাচ্ছে।
লোকসভায় ১৮টা সিট পেয়ে ভাবছেন ক্ষমতায় চলে আসবেন। তারা কোন উন্নয়ন করেছে।লোককে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলা থেকে কংগ্রেস চলে গিয়েছে,সিপিএম উৎখাত হয়ে গিয়েছে বিজেপিও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতবর্ষ থেকে চলে যেতে বসেছে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে কোন জায়গা পাচ্ছে না। তাই বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে। উত্তরপ্রদেশের মত ধর্ষন ও গুজরাটের মত দাঙ্গা করতে চাইছে বাংলায়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার নেতৃত্ব যা বোঝাচ্ছে বাংলায় নেতৃত্বরা তাই করছে। এখানকার নেতাদের কোন কিছু নেই। বাংলার মানুষ এই দাঙ্গাবাজ দলকে পশ্চিমবাংলায় এক ইঞ্চিও জায়গা দেবে না।’