
শরণানন্দ দাস, কলকাতা: কোচবিহারের (দক্ষিণ) কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের দিনই তৃণমূলের আর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন। আর এই জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল তৃণমূল নেত্রী। এই আবহে শনিবার তৃণমূল সুপ্রিমোকে তিব্র কটাক্ষ করলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বললেন, ‘এক মাসে উঠে যাবে দিদির দল’। তাঁর যুক্তি,’ যে পার্টি ছেড়ে সাংসদ-বিধায়করা চলে যান, সেই পার্টির আর আছেটা কী? প্রশ্ন তোলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের প্রতি সেই দলেরই বিধায়ক-সাংসদদের ভরসা নেই। তাহলে সাধারণ মানুষ এই সরকারের ওপর কীভাবে ভরসা রাখবে?’
শুভেন্দুর মন্ত্রীত্ব ত্যাগের পর শুক্রবার রাতেই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙন রুখতে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কালীঘাটে আঁচ পেয়ে বাঁকুড়ার প্রশাসনিক সভায় কল্পতরু হন বাংলার মখ্যমন্ত্রী। সবার জন স্বাস্থ্যসাথি প্রকল্প-সহ একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা কএন। কিন্তু মমতার সেই ঘোষণাকে ‘ভোটমুখী’ বলে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। এপ্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, ’১০ বছর আগে কল্পতরু ভলে দিদির পার্টির এই বিপর্যয় হত না’। তাঁর কটাক্ষ ‘ তৃণমূল সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেণ্টে পুরোপুড়ি ব্যর্থ। এখন দলের বিপর্যয় রুখতে দিদি খুব ব্যস্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটাই সব দায়িত্ব নিজের হাতে রাখছেন অথচ পার্টিটাই ওঁর হাতে নেই।’ উল্লেখ, বাঁকুড়ার মঞ্চ থেকে বিক্ষুদ্ধদের বার্তা দিয়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, গোটা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক তিনিই। এদিন দিলীপ ঘোষ তাঁর সেই মন্তব্যকেই খোঁচা দিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: দিবাস্বপ্ন দেখছে বিজেপি: ফিরহাদ
তৃণমূল নেত্রী গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ বিজেপির দোষটা কোথায়? আমরা ক্ষমতায় নেই। পুলিশ, প্রশাসন ওদের, বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে কেসের উপর কেস দিচ্ছে। তারপরেও যদি মানুষ বিজেপিতে যোগ দিতে আসেন তাহলে বুঝে নিতে হবে তৃণমূলের দিন শেষ হয়ে এসেছে।’ এই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘ ক্ষমতার দম্ভে অন্য দলের বিধায়ক, সাংসদদের ভয় দেখিয়ে, কেস দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে এক সময় ওঁরা দলে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন। গণতন্ত্রে এটা চলে না। এখন তাই দলে দলে নেতা কর্মীরা তৃণমূল ছাড়ছেন। বিজেপিতে যাঁরা আসছেন তাঁরা ক্ষমতার জন্য নয়, আদর্শের জন্য না হয় উন্নয়নের জন্য আসছেন।’ এদিন সকালে কৈখালিতে চা-চক্রে যোগ দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এখানেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আক্রমণের সুর চড়িয়ে বললেন, ‘রাজ্যে চাকরি নেই, শিল্প নেই। বিজেপি শাসিত রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন এখানকার শ্রমিকরা। এখন এ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। আগে এ রাজ্য থেকে আইএএস, আইপিএস তৈরি হত। তাঁরাই দেশজুড়ে কাজ করতেন। আর এখন এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন দেশের অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। এখানে এখন স্রেফ পরিযায়ী শ্রমিক তৈরি হয়।’